সহেলি মিত্র, কলকাতা: যত সময় এগোচ্ছে ততই ভারতে টন টন সোনা ফিরছে। সৌজন্যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI)। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রসঙ্গে একটি রিপোর্টে আরবিআই জানিয়েছে যে, অর্থবছর ২৬-এর প্রথম ছয় মাসে প্রায় ৬৪ টন সোনা দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এর ফলে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এখন দেশের সোনার রিজার্ভের ৬৫%-এরও বেশি ধারণ করেছে, যা চার বছর আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
ভারতে ৬৪ টন সোনা ফিরিয়ে আনল RBI
প্রকৃতপক্ষে, ইউক্রেন আক্রমণের পর পশ্চিমা দেশগুলি রাশিয়ার রিজার্ভ হিমায়িত করার পর আরবিআই ভারতে সোনা ফিরিয়ে আনার জন্য তৎপর হয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে, আরবিআই ৬৪ টনেরও বেশি সোনা ঘর ওয়াপসি করিয়েছে আরবিআই। এর আগে, ২০২৫ সালের মে মাসে, ইংল্যান্ড থেকে প্রায় ১০০ টন সোনা ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। এটি ১৯৯০ এর দশকের পর থেকে ভারতের বৃহত্তম সোনা স্থানান্তর কার্যক্রমগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়।
এক রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ৮৮০ মেট্রিক টন সোনা থাকবে। এটি গত বছরের তুলনায় প্রায় ২৫ টন বেশি। এর মধ্যে ৫৭৫.৮ টন ভারতে মজুদ রয়েছে, বাকিটা এখনও ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড এবং ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টস (বিআইএস) এর কাছে রয়েছে। ২০২৩ সালের মার্চ থেকে, রিজার্ভ ব্যাংক মোট ২৭৪ টন সোনা ভারতে ফিরিয়ে এনেছে। এর ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সোনার অংশ ১১.৭% থেকে বেড়ে ১৩.৯% হয়েছে, যদিও এর আংশিক কারণ সোনার দাম বৃদ্ধি। এখন প্রশ্ন উঠছে, সম্প্রতি যে এত টন সোনা আরবিআই ফিরিয়ে আনল, এর ফলে কি আগামী দিনে সোনার দাম কমার কোনও সম্ভাবনা আছে ভারতে? এই বিষয়ে এখনও অবধি স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি।
কেন এত সোনা ফিরিয়ে আনা হচ্ছে?
এই আরবিআই মিশনটি সম্পূর্ণ গোপনীয়। কেন্দ্রীয় বোর্ড এবং অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে শলা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইংল্যান্ড থেকে সোনা বিশেষ বিমানে আনা হয়, যা পুরো যাত্রা জুড়ে ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলি পর্যবেক্ষণ করে। মুম্বাই এবং নাগপুরে আরবিআইয়ের বিশেষ সোনার ভল্ট রয়েছে, যেখানে প্রতিটি ট্রান্সফারের পরে সোনা ওজন করা হয়, চেক করা হয় এবং সিল করা হয়। এখন প্রশ্ন উঠছে, আরবিআই কেন এমন করছে?
এই পদক্ষেপের পেছনে বেশ কিছু অর্থনৈতিক ও কৌশলগত কারণ রয়েছে। প্রথমত, বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং ডলার ব্যবস্থার অস্থিরতার কারণে, অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ভারতও সোনা নিজের ‘ঘর’-এই রাখতে স্বাছন্দ্যবোধ করছে। দ্বিতীয়ত, এটি আর্থিক সার্বভৌমত্বকে শক্তিশালী করার একটি পদক্ষেপ। ১৯৯১ সালের অর্থনৈতিক সংকটের সময়, ভারতকে ঋণের বিনিময়ে তাদের সোনা বিদেশে পাঠাতে হয়েছিল। আরবিআই চায় না যে এমন পরিস্থিতি আবার তৈরি হোক।