বিক্রম ব্যানার্জী, হাবড়া: বাবা পেশায় অ্যাম্বুলেন্স চালক। তাই ছেলেবেলা থেকেই সংসারের অভাব অনটনের সাথে মানিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। মুখ বুজে নিজের লক্ষ্যে অনড় ছিলেন উত্তর 24 পরগনার, হাবড়ার ছেলে সাহিল হরিজন।
অর্থকষ্ট যে কতটা যন্ত্রণার, তা বুঝবে শুধু তারাই যাঁদের পরিবার আদতেই অভাবী। এতদিন মূলত সেই অভাবের সাথেই সংসার করে এসেছিলেন সাহিল। তবে সবকিছুর মধ্যেও ফুটবলকে পা ছাড়া করেননি তিনি।
এবার সেই ছেলেই পেল পরিশ্রমের ফল। দীর্ঘ খাটুনির পর অবশেষে ভারতীয় ফুটবল দলে জায়গা পেলেন হাবড়ার গর্ব সাহিল। এখন অপেক্ষা, নিজের দক্ষতা প্রদর্শনের।
অনূর্ধ্ব-23 দলে জাত চেনাতে প্রস্তুত সাহিল
জাতীয় শিবিরে জায়গা হওয়া বাঙালি ফুটবলার সাহিল, হাবড়ার 8 নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকাতেই পরিবার নিয়ে বসবাস তাঁর। জানা গিয়েছে, বাবা অজয় হরিজন হাবড়া পুরসভার অস্থায়ী অ্যাম্বুলেন্স চালক। ছেলেবেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি ফুটবলের প্রতিই একরাশ ঝোঁক ছিল সাহিলের।
ছেলে যে ফুটবল পাগল, তা বুঝতে পেরেই সাহিলের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন বাবা অজয়। এরপর ছেলের স্বপ্নে শান দিতে অশোকনগরের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সাহিলকে ভর্তি করান তিনি। সেখানেই দীর্ঘদিন নিজের পরিবারের আর্থিক অবস্থার কথা মাথায় নিয়ে মুখ বুঝে অনুশীলন চালিয়ে গিয়েছিলেন বঙ্গ ফুটবলার।
পরবর্তীতে নিজের দক্ষতা দেখিয়ে কল্যাণী ইউনাইটেড স্পোর্টস ক্লাবে খেলার সুযোগ পান হাবড়ার ভূমিপুত্র। আর সেই দলই ভাগ্য ঘুরিয়ে দিয়েছিল সাহিলের। বলা বাহুল্য, কল্যাণীর ইউনাইটেড ক্লাবের হয়েই জেলা থেকে শুরু করে কলকাতা লিগ, সন্তোষ ট্রফি, আই লিগের সেকেন্ড ডিভিশন সবেতেই নিজেকে মেলে ধরতে থাকেন সাহিল হরিজন।
একের পর এক আসরে নিজের দক্ষতা দেখিয়ে শেষমেষ 23 বছর বয়সেই নিজের কর্মফল হাতেনাতে পেলেন সাহিল। অভাবের সংসারে কোনও মতে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখা সাহিল, বর্তমানে ভারতীয় অনূর্ধ্ব-23 দলের হয়ে মাঠ কাঁপাতে মুখিয়ে রয়েছেন।
ছেলের সাফল্য আনন্দে আত্মহারা বাবা অজয়
একেবারে হাতে করে ছেলেকে তৈরি করেছিলেন বাবা অজয় হরিজন। আজ সেই ছেলে ভারতীয় ফুটবল দলের সৈনিক। জানতে পেরেই চোখের কোণ ভিজিয়ে ছিল আনন্দের অশ্রু। সাহিলের এমন সাফল্যে বাবা অজয় জানান, ছেলের জন্য সেভাবে কিছুই করতে পারিনি। ভাল প্রশিক্ষণ দিতে পারিনি ওকে। নিজেই কঠোর পরিশ্রম করে ভারতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছে। দেশকে যেন জয় এনে দিতে পারে সেটাই আমার কামনা। পরিশ্রমের ফল পেয়েছে সাহিল, তাতে গর্বিত পরিবারের অন্যান্য সদস্য থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশীরাও।
অবশ্যই পড়ুন: মেয়াদ শেষে পাবেন ৫৫ লক্ষ টাকা! FD, RD নয়, LIC-র এই স্কিমেই মিটবে অর্থকষ্ট
উল্লেখ্য, সমস্ত প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে উঠে শেষমেষ কেরিয়ারের প্রথম বড় সাফল্য অর্জন করেছে হাবড়ার সাহিল। বঙ্গ ফুটবলার প্রমাণ করেছেন, মানুষ চাইলে সবই সম্ভব। এক কথায়, ভেতরে থাকা ফুটবলার হওয়ার খিদে এবং অভাবের সাথে লড়তে থাকা জেদ নিয়েই আজ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তুলে মাঠে নামার অপেক্ষায় বাঙালি ফুটবলার। বলা বাহুল্য, ভারতের হয়ে AFC চ্যাম্পিয়নশিপের ময়দানে নামবেন তিনি।