‘আপনারা রাজ্য সরকারের চাকরি করেন, হেনস্থা করবেন না!’ BLO-দের বুঝিয়ে দিলেন মমতা

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: বছর ঘুরতেই ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন। তাই তার আগে ভোটার তালিকা থেকে ভুয়ো ভোটার সরাতে উঠে পড়ে লেগেছে প্রশাসন। এইমুহুর্তে বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। ২০০৩ সালে বিহারে শেষবার SIR হয়েছিল। এরপর এই বছর ফের শুধুমাত্র যোগ্য ভারতীয় নাগরিকরাই ভোটদানের অধিকার যাতে পান সেটা নিশ্চিত করতে সংশোধনী করা হচ্ছে। বিহারের পরে এক এক করে অন্যান্য রাজ্যগুলিতে চলবে এই কাজ। তার মাঝে গত সপ্তাহেই BLO-দের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে কমিশন। কিন্তু সেকথা নাকি জানতেনই না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই এবার সেই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন তিনি।

BLO-দের প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্ষুব্ধ মমতা

এক্স হ্যান্ডেলে বঙ্গ বিজেপির একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গিয়েছে আজ অর্থাৎ সোমবার, বোলপুরের গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে প্রশাসনিক বৈঠকের আয়োজন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তিনি রাজ্যের একাধিক প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা রকম আলোচনা করেছিলেন মন্ত্রীদের সঙ্গে। আর সেই আলোচনার মাঝেই উঠে এসেছে ভোটার তালিকা প্রসঙ্গ। গত সপ্তাহ থেকেই নাকি BLO-দের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। নদিয়া, দুই ২৪ পরগণা এবং মুর্শিদাবাদ মিলিয়ে শতাধিক ব্লকের বিএলও-দের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী দিনে পর্যায়ক্রমে অন্য BLO-দেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কিন্তু জানতেন না মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যসচিব। তাই সেই নিয়ে শুরু হল আলোচনা।

বিহারের পর পরই যে এই রাজ্যেও ভোটার তালিকায় সমীক্ষার কাজ শুরু করবে কমিশন সেই কথা সরকারি ভাবে না বলা হলেও এই কাজের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত থাকবেন, সেই BLO-দের একাংশকে দফায় দফায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে গত ১৭-১৮ জুলাই প্রশিক্ষণ চলেছে দিল্লিতে। অন্যদিকে গতকাল অর্থাৎ রবিবার BLO দের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে কলকাতার নজরুল মঞ্চে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল। কিন্তু দিল্লিতে যে প্রশিক্ষণ নেওয়া হয়েছে সেই বিষয়টি কেন রাজ্যকে জানানো হয়নি তাই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

অযথা হেনস্থা না করার নির্দেশ মমতার

এদিকে এই ঘটনায় বেশ ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “জেলাশাসকদের একটু চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। অনেক সময় দেখছি জেলাশাসকেরা দায়িত্ব দিচ্ছেন নীচের কাউকে। এই যে ১০০০ লোককে দিল্লি নিয়ে গিয়েছে প্রশিক্ষণ দেওয়াতে। জেলাশাসকদের উচিত ছিল আমাকে বা মুখ্যসচিবকে বলা। কিন্তু তাঁরা সেটা করেননি।” এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। বিএলও-দের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দিয়েছেন যে, “ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পর দায়িত্ব নেয় নির্বাচন কমিশন। তার আগে এবং পরে রাজ্য সরকারের হাতেই প্রশাসনিক দায়িত্ব থাকে। আপনারা রাজ্য সরকারের চাকরি করেন। কোনও মানুষকে অযথা হেনস্থা করবেন না।”

আরও পড়ুন: ভিনরাজ্যে কর্মরত ২২ লাখ পরিযায়ী শ্রমিককে ফেরানোর নির্দেশ! বড় পদক্ষেপ মমতার

পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার নির্দেশ মমতার

উল্লেখ্য, এদিন বোলপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে উঠে এসেছে ভিনরাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের নির্যাতনের প্রসঙ্গ। তিনি ভরা মঞ্চে সরাসরি জানিয়ে দেন যে, বাংলায় যে সকল পরিযায়ী শ্রমিকেরা রাজ্যে ফিরে আসতে চান, তাঁদের ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়ে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম এবং মন্ত্রী মলয় ঘটককে আলোচনায় বসে জেলা ভিত্তিক তালিকা তৈরি করা নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

Leave a Comment