প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ২০২৬ এই শুরু হবে বিধানসভা নির্বাচন। মুখ্যমন্ত্রীর সিংহাসন দখলে কোন রাজনৈতিক দলের ঠাঁই হবে, তা নিয়ে চলছে জোর জল্পনা। এমতাবস্থায় ভোটার তালিকা নিয়েও কম বিতর্ক চলছে না। ইতিমধ্যে বিহারের শুরু হয়েছে ভোটার তালিকা সংশোধন কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কবে হবে তা নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোন নির্দেশ জারি করেনি নির্বাচন কমিশন। তবে করা হচ্ছে বিহারের পর পশ্চিমবঙ্গেও ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন হবে। আর এবার SIR নিয়ে এবার বাংলার BLO-রা স্পষ্ট মতবাদ দিতে চলেছে।
মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য BLO-দের
গত সোমবার, ২৮ জুলাই বোলপুরের প্রশাসনিক সভা থেকে বাংলায় ভোটার তালিকায় SIR শুরু করার আগেই, দায়িত্বপ্রাপ্ত BLO অর্থাৎ বুথ লেভেল অফিসারদের কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। BLO-দের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনারা যেসব লিস্ট করেছেন, BLO-দের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে ভোটার লিস্ট থেকে কারও নাম যেন বাদ না যায় সেটা দেখার।…এটা মনে রাখবেন আপনারা চাকরি করেন রাজ্য সরকারের।’ মুখ্যমন্ত্রীর এই ‘অনুরোধকে’ কার্যত হুঁশিয়ারি হিসেবেই দেখছেন BLO-রা। আর তাতেই তাঁদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মূলত ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন শুরু হওয়ার পর, কার নাম ভোটার তালিকায় থাকবে, কার নাম বাদ যাবে – তা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে এই BLO-রা। সেক্ষেত্রে এমন হুঁশিয়ারি কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি তারা। আর তাতেই গর্জে উঠলো একাধিক বিএলও।
কী বলছেন BLO-রা?
ABP বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে BLO-র দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষিকা অনিতা সরকার বলছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে বললেন এটা তো কোল্ড থ্রেট। ওনার নৈতিক অধিকার আছে? কমিশনকে সুরক্ষা দিতে হবে। আমি যদি দেখি কেউ ওই ঠিকানায় থাকে না, অন্য দেশের নাগরিক তাহলে তো আমায় বাদ দিতে হবে।’ এছাড়াও শিক্ষক তথা BLO চিরঞ্জিত ধীবর বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে আমাদেরকে অনুরোধের সুরে হুমকি দিয়েছেন, এটা খুবই অস্বাভাবিক। আমরা তো বিভিন্ন জায়গায় জানি যে মৃত ভোটার থাকতে পারে, ভুয়ো ভোটার থাকতে পারে তাহলে আমরা কেন বাদ দেব না? আমরা কিছুতেই শিরদাঁড়া বিক্রি করব না।’
রাজ্যে ভোটার তালিকায় এসআইআর নিয়ে প্রথম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘চ্যালেঞ্জ’ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছিলেন দুর্গাপুরের এক BLO। দুর্গাপুরের এক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক তথা বিএলও চিরঞ্জিত ধীবর ফেসবুকে লিখেছিলেন যে, ‘আমি মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করছি, ভুয়ো, মৃত ভোটার পেলে অবশ্যই নাম বাদ দেব। আমি বিএলও। নিরপেক্ষ ভাবে ডিউটি করা আমার দায়িত্ব। আমাদেরকে আপনি চাকরি দেননি যে, চাকরি কেড়ে নেওয়ার ভয় দেখাবেন।’ তারপরেই একে একে অসংখ্য BLO কর্মী সরকারের হুঁশিয়ারি মূলক মন্তব্যের প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে।
আরও পড়ুন: শিক্ষিকাদের গালিগালাজ করার অভিযোগ! চুঁচুড়ার বিধায়কের দম দেখে নেওয়ার হুঁশিয়ারি রচনার
এদিকে রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই বুথ লেভেল অফিসারদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ওই হুঁশিয়ারির পরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন যে, “রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জেলাশাসকদের ‘মৌখিক’ নির্দেশ দিয়েছেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এক হাজার বিএলও-কে বদলে দেওয়ার জন্য। রাজ্য সরকার যে ভাবে কমিশনের কাজে ‘অবৈধ’ হস্তক্ষেপ করছে, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।”