প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: আজ থেকেই শুরু হতে চলেছে ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ প্রকল্প। দুয়ারে সরকারের পর এবার নয়া অবতারে নামতে চলেছে এই প্রকল্প। পুজোর দিন এবং সরকারি ছুটির দিনগুলো বাদ দিয়ে জেলার প্রতিটি ব্লকে, গ্রামে বা শহরাঞ্চলে শিবির করে স্থানীয় সমস্যার খতিয়ান তুলে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। যেহেতু রাজ্যে প্রায় ৮০ হাজারের বেশি বুথ রয়েছে তাই ২৭ হাজার ক্যাম্প করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এই প্রকল্পের মাধ্যমে কোন কোন সরকারি পরিষেবার সুবিধা মিলবে।
বৈঠকে সরকারি পরিষেবা নিয়ে একাধিক উদ্যোগ
গত বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন সকল জেলার জেলাশাসক। সেই বৈঠকে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং প্রশাসনের অন্য শীর্ষকর্তারাও ছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ওই বৈঠক শুরু হয়। আর সেখানেই উঠে আসে ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ প্রকল্পের প্রসঙ্গ। জানা গিয়েছে আজ অর্থাৎ শনিবার, ২ আগস্ট থেকে এই শিবির শুরু হতে চলেছে। যা চলবে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্যই হল সরকারি পরিষেবা এবং এলাকার সমস্যার সমাধানকে বুথ স্তরে পৌঁছে দেওয়া। কী ভাবে শিবিরগুলি আয়োজন করতে হবে, কী ভাবে সেখানে অভিযোগ জমা পড়বে এবং কী ভাবে সেই সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে হবে, এবং এই শিবিরে কটি মোট পরিষেবা মিলবে তাও আলোচনা করা হয়েছে।
নবান্নের বিজ্ঞপ্তি
সংবাদ প্রতিদিনের রিপোর্ট অনুযায়ী, নবান্নের তরফে ইতিমধ্যেই ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ প্রকল্পের মোট ১৬ টি সরকারি পরিষেবার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। নিকাশি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নর্দমা ঢাকার বন্দোবস্ত, সোক পিট এবং কালভার্ট নির্মাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পানীয় সরবরাহ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে টিউবওয়েল, জলের পাইপের কাজ, পানীয় জলের বন্দোবস্ত এবং জলের ট্যাঙ্ক নির্মাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও সড়কের ধারে পথবাতি হিসেবে LED ও সোলার আলোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ার পরিবেশকে আরও আকর্ষিত করতে স্কুলের দেওয়ালের সৌন্দর্যায়ন বৃদ্ধির জন্য আঁকার ব্যবস্থা করা হয়েছে, শৌচালয় সংস্কার, পানীয় জলের বন্দোবস্ত, বেঞ্চ এবং পাকা ছাদের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বাজার এলাকায় পরিচ্ছন্নতা উন্নত করার জন্য সার্বজনীন শৌচাগার তৈরি করাও হচ্ছে।
পুকুর খনন থেকে শুরু করে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা
পাশাপাশি নবান্নের পাঠানো বিজ্ঞপ্তির তালিকা অনুযায়ী ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ প্রকল্পের ICDS কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য ছাদের দেখভাল, জলের বন্দোবস্ত, খেলার জায়গার ব্যবস্থা, সীমানা প্রাচীরের বন্দোবস্ত এবং নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হতে চলেছে। পুকুর খনন, ঘাট বাঁধানো, নোংরা ফেলার জায়গার ব্যবস্থা এবং ময়লা পরিষ্কারের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। গণপরিবহনের ক্ষেত্রে বাসস্টপে শেডের ব্যবস্থা, অটো অথবা রিকশা স্ট্যান্ড, পাকাপোক্ত ফুটপাত, যাত্রী যাতায়াতের ব্যবস্থা, ফুটব্রিজ এবং অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করা হতে চলেছে। এছাড়াও বাজারে স্টল সংস্কার, নিকাশির বন্দোবস্ত এবং আলোর ব্যবস্থা করার পাশাপাশি পার্ক বা খোলা জায়গায় ব্যায়ামাগার স্থাপন, গাছের গোড়া বাঁধানো এবং বসার জন্য বেঞ্চের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: TMCP-র প্রতিষ্ঠা দিবসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা! দিন বদলের জন্য চিঠি শিক্ষা দফতরের
রাজ্য সরকারের তরফে সাংস্কৃতিক উদ্যোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ছোট মঞ্চ, পতাকা উত্তোলনের বন্দোবস্ত, উৎসব আয়োজনের জায়গা এবং কমিউনিটি সেন্টার গঠনে মনোযোগ দিতে চলেছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নের ক্ষেত্রে কমিউনিট হল, স্কুল বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নতি, ট্রান্সফর্মারের ব্যবস্থা, বিদ্যুতের খুঁটি সংস্কার এবং পর্যাপ্ত জোগানের জন্য বিদ্যুৎ সঞ্চয় ব্যবস্থাও করা হতে চলেছে। এমনকি খোলা জায়গায় জনতার সুবিধার ক্ষেত্রে বেঞ্চ, শেড নির্মাণ এবং কমিউনিটি শেডের সংস্কারও করা হতে চলেছে। যেহেতু তিনটে করে বুথ নিয়ে একটা সেন্টার হবে তাই সব কাজ হবে অনলাইন মাধ্যমে, স্বচ্ছতা মেনে। সেক্ষেত্রে মানুষ নিজের সমস্যা নিজে জানাতে পারবেন।