বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: দুয়ারে সরকার প্রকল্পের পর এবার তৃণমূল স্তরে মানুষের সুবিধা অসুবিধা বুঝতে আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান কর্মসূচি চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই বিরাট কর্মযজ্ঞে 8 হাজার কোটি টাকা খরচ হবে বলেই জানিয়ে দিয়েছে নবান্ন।
কিন্তু রাজ্য কোষাগারের যা অবস্থা তাতে এই বিপুল অর্থ আসবে কোত্থেকে? আসলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বরাদ্দ বকেয়া নিয়ে নানাভাবে সুর চড়ালেও আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান কর্মসূচির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় অর্থে ভরসা রাখার ইঙ্গিত দিয়েছে বাংলার সরকার।
‘আপস’ কর্মসূচির জন্য কেন্দ্রীয় অর্থ ছাড়া গতি নেই!
আনন্দবাজারের রিপোর্ট অনুযায়ী, নবান্নের তরফে আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান বা আপস কর্মসূচির জন্য মোটা অঙ্কের খরচ দাবি করা হয়েছে। তবে সেই বরাদ্দ কোন কোন খাতে বিনিয়োগ করা হবে তার কোনও হিসেব ছিলনা জেলা কর্তাদের কাছে। রিপোর্ট অনুযায়ী খবর, বিভিন্ন জেলার কর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এই আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান কর্মসূচিতে যে খরচ হবে তার একটা বড় অংশ আসবে পঞ্চদশ অর্থ কমিশন থেকেই।
বাস্তবে, পশ্চিমবঙ্গসহ গোটা দেশে জল জীবন মিশনের অর্থ বরাদ্দ বন্ধ থাকলেও, জলপ্রকল্প সংক্রান্ত আপস কর্মসূচির খরচের উৎস হিসেবে সেই প্রকল্পকেও ধরতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি নাকি স্বচ্ছ মিশন থেকেও খরচের অর্থ আসবে। তবে জানা যাচ্ছে, বেশ কিছু ছোট ছোট কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বরাদ্দগুলিকে ব্যবহার করা হতে পারে।
অবশ্যই পড়ুন: এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের লাইভ টেলিকাস্ট প্রশ্নের মুখে, দেশের স্বার্থে বড় আবেদন
বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের বক্তব্য, বিগত দিনগুলিতে নানান প্রকল্পের কারণে কার্যত ডুবে রয়েছে রাজ্যের কোষাগার। ফলে, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থ ভান্ডারের যা অবস্থা তাতে অন্যান্য প্রকল্প চালানোর পাশাপাশি আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান কর্মসূচিতে টাকা ঢালাটা যথেষ্ট কঠিন কাজ হবে।
তাছাড়াও সদ্য শ্রমশ্রী প্রকল্প ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে রাজ্যে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকরা আপাতত এক বছর ধরে প্রতিমাসে 5 হাজার টাকা করে অনুদান পাবেন। সরকারি হিসেব বলছে, পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে প্রায় 22 লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন। ধরা যাক, তাদের মধ্যে যদি 10 শতাংশ ফিরে আসেন সেক্ষেত্রে তাদের আগামী এক বছর পর্যন্ত মাস 5 হাজার টাকা দেওয়ার অর্থ সরকারের এই খাতে অন্তত 1320 কোটি টাকা খরচ হয়ে যাবে।
এছাড়াও 2026 বিধানসভা ভোটের আগে অন্যান্য প্রকল্প মিলিয়ে লক্ষীর ভান্ডারের মতো প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রেও নতুন পরিকল্পনা আসতে পারে। ফলে সেখানেও অর্থ ছাড়া দ্বিতীয় কথা চলবে না। একই সাথে আবাস প্রকল্পের নতুন 16 লক্ষ উপভোক্তার জন্য প্রায় 19,200 কোটি টাকা খরচ ঘোষণা আছে। এদিকে রাজ্য কোষাগরের অবস্থা বেহাল।
সব মিলিয়ে, অভিজ্ঞ মহলের একটা বড় অংশের দাবি, নতুন করে আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান কর্মসূচির জন্য অতিরিক্ত 8 হাজার কোটি টাকার জোগাড় করাটা রাজ্য সরকারের পক্ষে আদতেই অষ্টসাধ্য হবে। ফলে ইঙ্গিত মতোই কেন্দ্রীয় অর্থতেই ভরসা করতে হচ্ছে বাংলার সরকারকে। তবে আশঙ্কা, যদি শেষ পর্যন্ত অর্থ কমিশনের বরাদ্দ না আসে সেক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর নতুন আপস কর্মসূচি সমস্যার মুখে পড়তে পারে। শুধু তাই নয়, বিধানসভা নির্বাচনের আগে এমনটা হলে বিরোধীপক্ষ তো বটেই পাশাপাশি রাজ্যবাসীর প্রশ্নের কাঠগড়াতেও উঠতে হবে রাজ্য সরকারকে!