আম্বানি, আদানি নয় – বিশ্বের বৃহত্তম বাড়িতে থাকেন ভারতের এই মহিলা!

Radhikaraje Gaekwad
Radhikaraje Gaekwad

আপনি কি জানেন আমাদের দেশে এমন একজন মহিলা রয়েছেন যিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাড়িতে বাস করেন। আর সেই বাড়ি মুকেশ আম্বানির অ্যান্টিলিয়ার চেয়েও প্রায় ৫০ গুণ, এবং ব্রিটেনে অবস্থিত বাকিংহাম প্যালেসের চেয়ে ৩৬ গুণ বড়। না, আজ আমরা কথা বলছি না আম্বানি কিংবা আদানির। আজ আমরা কথা বলছি রাধিকারাজে গায়কোয়াড়ের (Radhikaraje Gaekwad)।

রাধিকারাজে গায়কোয়াড় | Radhikaraje Gaekwad

রাধিকারাজে গায়কোয়াড়, জন্ম ১৯৭৮ সালে। তিনি গুজরাতের ওয়াঙ্কানেরে রাজ পরিবারে সন্তান। তাঁর পিতা ডঃ এমকে রঞ্জিতসিং ঝালা, একজন আইএএস অফিসার। আপনি জানলে অবাক হবেন, আইএএস অফিসার হয়ে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার জন্য, তিনি নিজের রাজা উপাধি পর্যন্ত ত্যাগ করেছিলেন।

রাধিকারাজে গায়কোয়াড় যিনি একজন মহারাণী হওয়ার পাশাপাশি একাধিক গুণসম্পন্ন একজন ব্যাক্তিত্ব। তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেডি শ্রী রাম কলেজ থেকে ভারতীয় ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন, এবং তারপর সাংবাদিক হিসেবে বেশ কিছুদিন কাজ করেন। এরপর ২০০২ সালে তিনি বরোদার মহারাজা সমরজিতসিংহ গায়কোয়াড়ের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, এবং আজ তিনি সারা বিশ্বের বৃহত্তম ব্যক্তিগত বাসভবনের মহারাণী। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই প্রাসাদ সম্পর্কে।

বিশ্বের বৃহত্তম ভবন

রাধিকারাজে গায়কোয়াড় বর্তমানে বাস করেন গুজরাতের ভদোদরার সদারাপুরে অবস্থিত লক্ষ্মী ভিলাস প্যালেসে। ১৮৭৮ সালে এই রাজবাড়ি তৈরি করেন মহারাজা তৃতীয় সায়াজীরাও গায়কোয়াড়। পৃথিবীর বৃহত্তম ভবন হিসাবে পরিচিত এই প্রাসাদটি প্রায় ৩ কোটি ৫ লক্ষ বর্গফুট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। আর সব থেকে যে বিষয়টি জানলে আপনি অবাক হবেন, সেটি হল এটি অ্যান্টিলিয়ার চেয়েও প্রায় ৫০ গুণ বেশি এবং বাকিংহাম প্যালেসের চেয়ে প্রায় ৩৬ গুণ বেশি বড়।

ভারতের বেশিরভাগ প্রাসাদ যেখানে তেলের প্রদীপ দ্বারা আলোকিত। অধিকাংশ ডিজাইন পুরানো ভাস্কর্যে ভরা। সেখানে ১৮৯০ সালে এই লক্ষ্মী ভিলাস প্যালেসে লিফট, সারা ভবনে ইলেকট্রিকের ওয়্যারিং, উন্নত প্লাম্বিং, বৈদ্যুতিক ঘণ্টা, অভ্যন্তরীণ টেলিফোন ব্যবস্থা এবং সেন্ট্রাল এয়ার সিস্টেমের ব্যবস্থা ছিল।

এছাড়া, প্রাসাদের ভেতরেও একাধিক অনবদ্য শিল্পকলার ছাপ এখনও পরিলক্ষিত হয়। ১৭০টি কক্ষের এই প্রাসাদে ইন্দো-সারাসেনিক স্থাপত্য সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, যা ভারতীয়, ইসলামিক ও ইউরোপীয় উপাদানের মিশ্রণে গড়ে উঠেছে। একদিকে এই স্থাপত্য যেমন এই প্রাসাদকে করে তুলেছে সবার থেকে আলাদা, তেমনই এটি বৈচিত্র্যের মেলবন্ধনের এক অনন্য উদাহরণ। প্রাসাদের বাইরের দিকে যেমন রয়েছে একাধিক মুঘল গম্বুজ, তেমনই অন্যদিকে রয়েছে গাড়ি হল, অস্ত্রশালা, শিবাজির তলোয়ার, ঔরঙ্গজেবের তলোয়ার, দামি রত্ন-মুক্তা সহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক অস্ত্র সহ বেলজিয়ামের ঝাড়বাতি, ইতালীয় মোজাইক, ফরাসি রোকোকো শিল্প, পর্তুগিজ টাইলস, রাজসিংহাসন কক্ষ, এবং রাজা রবি বর্মা, ফেলিসি, এবং অন্যান্য শিল্পীদের অমূল্য শিল্পকর্মের নান রকম সংগ্রহ।

এই প্রাসাদের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত রয়েছে একটি জাঁকজমকপূর্ণ দরবার। এটি সাধারণত জনসাধারণের একত্রিত হওয়ার স্থান হিসেবে নির্মিত হয়েছিল। দরবারে রয়েছে, ইটালিয়ান মোজাইক ফ্লোর, বেলজিয়ান স্টেইনড-গ্লাস উইন্ডোজ, কৃত্রিম আরবেস্ক ল্যাকর সিলিং, বড় বড় ঝাড়বাতি, নয়নাভিরাম আর্ট-কর্ম। এই প্রাসাদের প্রধান আর্কিটেক্ট ছিলেন মেজর চার্লস ম্যান্ত, এবং পরবর্তীকালে রবার্ট ফেলোজ চিসলম এই প্রাসাদের বাকী কাজ শেষ করেন।

এছাড়া, এই প্রাসাদ চত্বরে রয়েছে প্রায় ৫০০–৭০০ একর বিস্তৃত এলাকা, যেখানে রয়েছে গল্ফ কোর্স, যা প্রথমে ব্যক্তিগত অতিথিদের জন্য নির্ধারিত হলেও, এটি পরে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এছাড়াও রয়েছে মতি বাগ ক্রিকেট গ্রাউন্ড, লক্ষ্মী ভিলাস প্যালেস ব্যাঙ্কোয়েট, মহারাজা ফতেহ সিং মিউজিয়াম বিল্ডিং, ইনডোর টেনিস ও ব্যাডমিন্টন কোর্ট।

এই প্যালেস যে শুধুমাত্র শিল্পকর্ম, কিংবা ভাস্কর্যে ভরা তা কিন্তু নয়, সামাজিক ও চিন্তা-ভাবনার দিক থেকেও এই প্রাসাদ ছিল অনেকটাই উন্নত। বিভিন্ন রিপোর্ট মারফত জানা গিয়েছে, সেই সময়ে এই প্রাসাদের মহিলারা পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকার পরিবর্তে শিক্ষিত, এবং সোচ্চার ছিলেন।

বর্তমানে এই বাড়িতে মহামান্য সমরজিত সিং রণজিত সিংহ গায়কোয়াড়, তাঁর স্ত্রী রাধিকারাজে, তাদের কন্যা পদ্মজারাজে এবং নারায়ণিরাজে এবং রানী মা শুভাঙ্গিনীরাজে বসবাস করেন। লক্ষ্মী ভিলাস প্যালেস শুধুমাত্র একটি রাজবাড়ি নয় – এটি শিল্পকলার পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়ন ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের অনন্য মডেল। এটি আজও ইতিহাস আর আধুনিকতার এক আকর্ষণীয় মিলনবিন্দু।

Leave a Comment