সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অসন্তোষের হাওয়া। ছাত্রনেতা শরীফ ওসমান হাদির (Osman Hadi) মৃত্যুর পর এবার তাঁর ভাই ওমর হাদি সরাসরি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে গুরুতর অভিযোগ করলেন। তাঁর দাবি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বানচাল করার জন্য পরিকল্পিতভাবেই হাদিকে খুন করা হয়েছিল। হ্যাঁ, মঙ্গলবার ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওমর হাদি স্পষ্ট বলেন, ওসমান হাদিকে ক্ষমতার মধ্যে থাকা একটি গোষ্ঠী খুন করেছে। আর এই হত্যাকাণ্ডকে ব্যবহার করে নির্বাচন ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
কীভাবে খুন হয়েছিলেন ওসমান হাদি?
জানিয়ে রাখি, ইনকিলাব মঞ্চের মুখ্য নেতা শরীফ ওসমান হাদি ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের সবথেকে জনপ্রিয় মুখ ছিলেন। ঢাকার এক মসজিদ থেকে বেরোনোর সময় তাঁকে গত ১২ ডিসেম্বর প্রকাশ্যে গুলি করা হয়। এমনকি তিনি তখন রিক্সাতে করে আসছিলেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারপর এভারকেয়ারে ট্রান্সফার করা হয়। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখাতে তাঁকে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয় চিকিৎসার জন্য। তবে ১৮ ডিসেম্বর তিনি সেখানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৩২ বছরের এই নেতা আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী ছিলেন বলেও খবর। তাঁর মৃত্যুর পর বাংলাদেশ জুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র অসন্তোষ।
এদিকে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে ওসমান হাদির ভাই বলেন, দ্রুত খুনিদের বিচার নিশ্চিত করুন। এখনও পর্যন্ত সরকার কোনও রকম অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। যদি আমার ভাইয়ের ন্যায়বিচার না হয়, তাহলে একদিন আপনাদেরও শেখ হাসিনার মতো দেশ ছাড়তে বাধ্য করব। ওমর হাদির অভিযোগ, তাঁর ভাই কোনও সরকারি সংস্থা বা বিদেশি সংস্থার কাছে মাথা নত করেনি বলেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, ওসমান হাদি কোনওদিন আপস করেনি বলেই আজ তাঁকে আমাদের মধ্যে রাখা হয়নি।
আরও পড়ুন: শিল্পী লগ্নজিতার পাশে দাঁড়ানোই হল কাল, শাসকের চাপে বাতিল গায়ক পল্লব কীর্তনিয়ার শো
এদিকে তাঁর মৃত্যুর পর গোটা বাংলাদেশ জুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। শত শত মানুষ ১৮ ডিসেম্বর থেকেই রাস্তায় নামে। বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, এমনকি সংবাদমাধ্যমের দফতরে হামলার ঘটনা ঘটে। সবথেকে বড় ব্যাপার, এই উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যে আরও এক নৃশংস ঘটনা ঘটে। ঢাকার ময়মনসিংহে এলাকায় হিন্দু শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে মেরে খুন করা হয়। তারপর তাঁর দেহ গাছে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, যা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নিরাপত্তা নিয়ে আরও বড় প্রশ্ন তুলছে।