ইমামের আযানের মাধ্যমে শুরু হয় পূর্বস্থলীর এই কালী পুজো, শুরু হয়েছিল ২৫০ বছর আগে

Purbasthali

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: আযানের মাধ্যমেই শুভ সূচনা হয় শ্যামা মায়ের আরাধনার! মুসলিম মৌলভীর হাত দিয়েই গ্রামবাসীদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয় বাতাসা! আজব ঘটনা পূর্বস্থলীর (Purbasthali) গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। প্রাচীন এই আড়াইশো বছরের কালীপুজোর ইতিহাসে লুকিয়ে রয়েছে একাধিক ঘটনা, তাইতো নিষ্ঠাভরে আজও রীতি মেনে পালন করা হয় শ্যামা মায়ের আরাধনা।

ঘটনাটি কী?

স্থানীয় রিপোর্ট অনুযায়ী, পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর এক নম্বর ব্লকের নসরতপুর পঞ্চায়েত এলাকার অন্তর্গত নিংড়ায় প্রতি বছরের মত এবারেও আযানের মাধ্যমে শুরু হয় শ্যামা পুজোর আরাধনা। মুসলিম মৌলভীর আযান এবং হরির লুটের মত বাতাসা বিলির মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। কথিত আছে, প্রায় আড়াইশো বছর ধরে এমনি ধর্মীয় সম্প্রীতির রীতি দেখা যায় এই এলাকায়। এখানকার শ্যামা মা ওলা দেবী হিসেবে পূজিত হয়ে থাকেন। কারণ এখানে অনেক বছর আগে কলেরা রোগ মহামারীর আকার ধারণ করেছিল। গ্রামের অনেক মানুষ এই কলেরায় মারা গিয়েছিলেন যার ফলে এই গ্রাম এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামের সকল বাসিন্দা জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে একসঙ্গে হয়ে শ্যামা মায়ের আরাধনা করেছিলেন। তারপর থেকেই এই পুজো হয়ে আসছে।

মুসলিম বাড়ি থেকে চাল ভিক্ষা করে আনা হয়

পূর্বস্থলীর নসরতপুর পঞ্চায়েত এলাকার অন্তর্গত নিংড়ায় প্রাচীন প্রথা মেনে প্রতি বছর মুসলিম মৌলভীর আযান দেওয়া থেকে শুরু করে হয় শ্যামা মায়ের আরাধনা। গ্রামের সকল পরিবার এই পুজোয় যোগদান করেন। এই উৎসব যেন তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড় উৎসব হিসেবে পরিচিত। জানা যায়, পুজোর আগের দিনগুলোতে মুসলিম বাড়ি থেকে চাল ভিক্ষা নিয়ে আসে পূজো উদ্যোক্তারা, আর সেই চাল বাজারে বিক্রি করে সেই টাকায় কিনে আনা হয় মা কালীর আরাধনার জন্য বাতাসা এবং গুড়ের সামগ্রী। অত্যন্ত ভক্তি এবং শ্রদ্ধা দিয়েই শুরু হয় এই আরাধনা।

আরও পড়ুন: প্রাক্তন SFI নেত্রী গাইলেন মমতার উন্নয়নের পাঁচালি! তৃণমূলের প্রার্থী হবেন ‘মহানায়ক’ ইমন?

প্রসঙ্গত, বর্তমানে যেখানে সমাজে হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে একাধিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সেখানে পূর্বস্থলির এই সাম্প্রদায়িক পুজো সকলের মনে এক আলাদাই শান্তির পরিবেশ তৈরি করেছে। কোনো রকম ধর্মীয় অশান্তির আঁচ এই গ্রামে পড়তে দেখা যায়নি। শ্যামা মায়ের এই পুজোর সূচনা প্রসঙ্গে প্রধান পুরোহিত বলেন, “প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো এই শ্যামা মায়ের পুজোতে কোনো ধর্ম জাত-পাত মানা হয় না। তাইতো মুসলিম মৌলভীর আযানের মাধ্যমেই শুরু হয় এই পুজো।”

Leave a Comment