বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: রবিবারের ডুরান্ড কাপের ডার্বির রঙ ছিল লাল হলুদ। যুবভারতীর ময়দানে প্রতিপক্ষ মোহনবাগানকে এক চুল জায়গাও ছাড়েনি জয়ের সরণিতে ফেরা ইস্টবেঙ্গল।
গতকাল গোটা ম্যাচে বাগান প্লেয়ারদের উপর চাপ বজায় রেখেছিল ইস্টবেঙ্গলের ছেলেরা। একদিক থেকে মোহনবাগানের জেমি ম্যাকলারেনদের আটকে রেখে নিজেদের কার্যসিদ্ধি করার আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। আর তাতেই এসেছে সাফল্য।
এদিন কার্যত মোহনবাগানের গলার টুটি চেপে একাই জোড়া গোল করেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের তারকা ফুটবলার দিমিত্রিয়স দিয়ামনতাকোস। প্রথমে পেনাল্টি তারপর নিজের দমে বাগানের জাল ভরিয়ে গোল আদায় করে নেন তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত এক গোল শোধ করে দ্বিতীয় বারের মতো ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা হয়নি মোহনবাগানের।
ফুটবল বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, গতকাল ইস্টবেঙ্গলের বেশ কিছু গুণ মোহনবাগানকে একেবারে মাঠে মেরেছে। সেই সাথে রয়েছে লাল হলুদের প্রধান কোচ অস্কার ব্রুজোর রুদ্ধদ্বার অনুশীলনের সিদ্ধান্ত। কিন্তু ঠিক কোথায় হারল মোহনবাগান? কোন বিষয়টা হয়ে উঠল ইস্টবেঙ্গলের সাফল্যের মূল মন্ত্র?
পুরনো রোগ সারিয়েছে ইস্টবেঙ্গল
রবিবার মোহনবাগানের বিরুদ্ধে লাল হলুদের জয়ের নেপথ্যে অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণভাগ। বিগত দিনগুলিতে যেখানে ইস্টবেঙ্গল বার বার রক্ষণের রোগে ভুগেছে, সাম্প্রতিক ম্যাচগুলিতে সেই সমস্যা একেবারে কাবু করতে পারছে না ইস্টবেঙ্গলকে।
কারণটা একেবারে জলের মতো পরিষ্কার। দীর্ঘ পরিকল্পনার পর ধীরে ধীরে দলের ফাঁক ভরাট করেছেন কোচ অস্কার। লাল হলুদের রক্ষণে হিজাজি মাহেরের বদলে আনা হয়েছে কেবিন সিবিলেকে। রবিবার তিনিই আনোয়ার আলির সাথে জুটি বেঁধে জেমি ম্যাকলারেনদের জায়গা খুঁজতে দেননি।
বলা চলে, লাল হলুদের রক্ষণভাগ শক্ত করেই মোহনবাগানকে পরাস্ত করেছেন স্প্যানিশ কোচ অস্কার। তাছাড়াও, নতুন বিদেশি মিগুয়েল, হামিদ আহদাদদের দলে অন্তর্ভুক্তিও ইস্টবেঙ্গলের সাফল্যের মূল মন্ত্র হয়ে উঠেছে।
আক্রমনাত্মক ফুটবল
পুরনো যন্ত্রণা ভুলে সাম্প্রতিক ম্যাচগুলিতে বিশেষ কৌশল নিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার। বিগত বেশ কয়েকটি ডার্বিতে দেখা গিয়েছে, ইস্টবেঙ্গল একেবারে ম্যাচের শুরু থেকেই মোহনবাগানের উপর চাপ বজায় রেখেছে। অর্থাৎ ম্যাচের একেবারে জন্ম লগ্ন থেকেই আক্রমনাত্মক ফুটবল খেলে প্রতিপক্ষের ঘাম ছুটিয়েছে ইস্টবেঙ্গলের ছেলেরা।
রবিবারও সেই একই নিয়মে প্রথমার্ধে একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে মোহনবাগানকে কার্যত কোণঠাসা করে ফেলেছিল মশাল ব্রিগেড। দেখা যায়, আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেই প্রথমার্ধে এগিয়ে থাকে ইস্টবেঙ্গল। এরপর ম্যাচের বাকি অংশ শুরু হতেই সেখানেও আরও এক গোল করে 2-0 ব্যবধান তৈরি করে লাল হলুদ। আর এসবের নেপথ্যে ছিল ইস্টবেঙ্গলের মুহুর্মুহু আক্রমণ।
অবশ্যই পড়ুন: ফের দিল্লির একাধিক স্কুলে বোমা হামলার হুমকি! বাদ গেল না কলেজও, ঘটনাস্থলে বম স্কোয়াড
দলের ছেলেদের সঙ্ঘবদ্ধ লড়াই ও গোল করার খিদে
গত মরসুমের ম্যাচগুলিতে একের পর এক পরাজয় দেখতে হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলকে। যার কারণে বহুবার নানান সমালোচনার শিকার হতে হয়েছিল কলকাতার এই ঐতিহ্যবাহী দলটিকে। একদিকে প্রতিবেশী মোহনবাগান যেখানে একের পর এক আসরে সাফল্য প্রাচ্ছে, সেই পর্বে দাঁড়িয়ে ইস্টবেঙ্গলের উপহার শুধুই বিদ্রুপ।
তাই নিজেদের ভুল ত্রুটি শুধরে জয়ে ফেরার খিদেটা ছিল ইস্টবেঙ্গলের। আর সেই গোল করার খিদে নিয়েই রবিবার সঙ্গবদ্ধভাবে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে লড়েছে লাল হলুদের ছেলেরা। বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি, ইস্টবেঙ্গল প্লেয়ারদের একত্রিত লড়াইয়েই হারতে হল মোহনবাগানকে।