সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: জানলে হয়তো অবাক হবেন, ভারতে এমন একটি গ্রাম রয়েছে যেখানে গৃহস্থলীর বর্জ্য কেনা হচ্ছে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেই। হ্যাঁ, আমরা বলছি বিহারের সিওয়ানের নৌতান ব্লকের লাখওয়া গ্রামের কথা। জানা যাচ্ছে, স্বচ্ছ বিহার অভিযানের আওতায় চালু হওয়া এই উদ্যোগে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেই গৃহস্থালির বর্জ্য পদার্থ সংগ্রহ করা হয় (Bihar Waste Management)। সেই সূত্রে এই গ্রামে যেন গৃহস্থলীর বর্জ্য মূল্যবান সম্পদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, গ্রামবাসীরা কাবাব মান্ডি নামক একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেই তাদের এই বর্জ্যগুলো বিতরণ করে, এবং তার পরিবর্তে মোটা টাকাও আয় করে।
আসলে এই অ্যাপে প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে আসরাজ স্ক্র্যাপ সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি সংস্থা নির্ধারিত সময়ে দোরগোড়ায় পৌঁছে সেই বর্জ্যগুলিকে ওজন করে তার ভিত্তিতে নগদ অর্থ প্রদান করে গ্রাহকদের। এক কথায় এই অ্যাপ বর্জ্য সংগ্রহ থেকে অর্থ প্রদান সংক্রান্ত গোটা প্রক্রিয়াকেই পরিচালনা করে। এমনকি বিভিন্ন ধরনের বর্জ্যের জন্য নির্দিষ্ট রেটও নির্ধারণ করা রয়েছে।
কোন বর্জ্যের কত দাম?
সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে এই অ্যাপের মধ্যে বিভিন্ন রকম বর্জ্যের বিভিন্ন রকম রেট নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন প্লাস্টিক বোতল প্রতি কেজি ১৫ টাকা, কালো প্লাস্টিক প্রতি কেজি ২ টাকা, সদ্য মিশ্রিত প্লাস্টিক প্রতি কেজি ৫ টাকা, বড় কার্ড বোর্ড প্রতি কেজি ৮ টাকা, মাঝারি কার্ড বোর্ড প্রতি কেজি ৬ টাকা, ছোট পিস বোর্ড প্রতি কেজি ৪ টাকা, কাগজ প্রতি কেজি ৩ টাকা এবং টিন প্রতি কেজি ১০ টাকা করে বিক্রি হয়।
শুধু তাই নয়, ল্যাপটপের ব্যাগ থেকে শুরু করে বোতলের ব্যাগ, ক্যারিব্যাগ, মহিলাদের পার্স, ডায়েরি সহ বিভিন্ন রকম গৃহস্থলীর বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। এ বিষয়ে বিহারের গ্রামীণ উন্নয়ন এবং পরিবহন মন্ত্রী শ্রাবণ কুমার বলেছেন যে, কঠিন এবং তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে গৃহস্থলীর বর্জ্য পৃথকীকরণ, সংগ্রহ, পরিবহন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে নয়া মাত্রা যোগ করছে না, বরং বিহারে উৎপাদিত বর্জ্যগুলি এখন অন্যান্য রাজ্যের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন: নতুন বছরের শুরুতেই একগাদা ট্রেন বাতিল, তালিকা দিল দক্ষিণ-পূর্ব রেল
বর্জ্যগুলো দিয়ে কী করা হয়?
বেশ কয়েকটি রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, এই গ্রাম থেকে সংগৃহীত বর্জ্য সরাসরি প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট এবং বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটে পরিবহন করা হয়। আর সেখানে বৈজ্ঞানিকভাবেই এগুলি দিয়ে ল্যাপটপের ব্যাগ, বোতল, লেডিস পার্স, ডায়েরি, চাবি রিং এর মতো দরকারী বা টেঁকসই পণ্য প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এতে পরিবেশ দূষণ হ্রাসের পাশাপাশি স্থানীয় কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়। সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৭০২০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট এবং ১৭১টি প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে।