সহেলি মিত্র, কলকাতা: ফের শিরোনামে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় (Jadavpur University)। এবার হিজাব বিতর্কে জড়াল বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে হিজাব সংক্রান্ত একটি ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানায়। গত সোমবার ইউজি তৃতীয় বর্ষের ইংরেজি পরীক্ষার সময় একজন ছাত্রীকে তার হিজাব খুলতে বলা হলে বিতর্ক শুরু হয়। নিরাপত্তা পরীক্ষার জন্য পরিদর্শক তাকে তার হিজাব খুলতে বলেছিলেন বলে অভিযোগ। ছাত্রীটি এই আচরণকে বৈষম্যমূলক বলে বর্ণনা করেছে। কারণ তাকে নাকি তার ব্যক্তিগত পছন্দ সম্পর্কেও প্রশ্ন করা হয়েছিল। যাইহোক, এবার এই বিষয়ে মুখ খুলেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
হিজাব বিতর্কে মুখ খুলল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
নিরাপত্তা এবং ধর্মীয় অনুভূতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ছাত্র ইউনিয়ন একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক করেছিল বলে খবর। গত ২৩ বছর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা করছেন শাশ্বতী হালদার। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি কখনও। বর্তমানে তিনিই বিভাগীয় প্রধান। গত ২২ ডিসেম্বর তিনিই স্নাতক তৃতীয় বর্ষের পঞ্চম সেমেস্টারের এক ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছাত্রীকে অন্য ঘরে নিয়ে গিয়ে কথা বলেছিলেন। সবটাই ঘটেছিল পরীক্ষায় স্বচ্ছতার স্বার্থে ছাত্রীর সম্মতিতে। অধ্যাপিকার আরও দাবি, তল্লাশির আগে ও পরে তিনি ছাত্রীর কাছে দুঃখপ্রকাশও করেছিলেন। সে সময় ছাত্রীটি কোনও আপত্তি তোলেননি বরং নিজেই হিজাব খুলে দেখিয়ে প্রমাণ করেছিলেন তাঁর কানে হেডফোন নেই। অধ্যাপিকা এবং তাঁর সঙ্গে এক মহিলা গবেষক দাঁড়িয়েছিলেন পাশে। তাঁরা কেউই ছাত্রীর গায়ে হাত দেননি।
আরও পড়ুনঃ উপকৃত হবেন পর্যটকরা, হাওড়াগামী বন্দে ভারত এস্কপ্রেসের সপ্তাহে তিনদিন স্টপেজ বাড়াল রেল
এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপিকা বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা আমার সন্তানের মতো। পরীক্ষা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই আমাদের নজরদারি চালাতে হয়। সেই মতোই সে দিন তল্লাশি চলছিল। ওই ছাত্রীর সম্মানহানি হয় বা ভাবাবেগে আঘাত লাগে, এমন কোনও আচরণ আমি করিনি। এমনকি ছাত্রীও তেমন কিছু জানায়নি আমাকে। তার পর যা ঘটল, তাতে আমি হতবাক।’
গুরুতর অভিযোগ ছাত্রীর
ছাত্রীর কথা অনুযায়ী, সোমবার সে তার তৃতীয় বর্ষের ইংরেজি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল, ঠিক সেই সময় পরিদর্শক হঠাৎ তাকে থামিয়ে দেন। পরিদর্শক সন্দেহ করেন যে তিনি তার হিজাবের মধ্যে ওয়্যারলেস হেডফোন বা কোনও ইলেকট্রনিক ডিভাইস লুকিয়ে রেখেছেন। প্রমাণ করার জন্য তাকে তার স্কার্ফটি সামান্য তুলতে বলা হয়। ছাত্রীটি ঘটনাটিকে অপমানজনক বলে বর্ণনা করে। এদিকে তাকে পরীক্ষার মাঝপথে হঠাৎ করেই পরীক্ষা ছেড়ে দিতে হয়েছিল।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশে ‘রকগুরু’ জেমসের কনসার্টে ইটবৃষ্টি! আহত ২৫ থেকে ৩০ জন
ওই ছাত্রী জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বেশ কয়েকবার বৈষম্যের শিকার হয়েছেন তিনি। তবে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে তিনি সবসময় নিরাপদ বোধ করতেন । তিনি বলেন যে সোমবারের ঘটনাটি সেই নিরাপত্তার অনুভূতিকে সম্পূর্ণরূপে নষ্ট করে দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন যে পরিদর্শক কোনও দৃঢ় ভিত্তি ছাড়াই তাকে জনসমক্ষে বাধা দিয়েছিলেন, যার ফলে তার মনোযোগ ব্যাহত হয় এবং তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।