প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ফের অশান্ত বাংলাদেশ! হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ওসমান হাদির মৃত্যুতে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশের (Bangladesh) রাজধানী ঢাকা। জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে দোষীদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি ইউনূসের ৷ শনিবার বাংলাদেশে পালন করা হবে রাষ্ট্রীয় শোক। এদিকে হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই বাংলাদেশের ঢাকার শাহবাগ সহ একাধিক জায়গায় বিক্ষোভ, অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। বাদ যায়নি সংবাদপত্রের অফিসগুলিও। ক্ষুব্ধ জনতা ন্যায়ের দাবিতে ভাঙচুর শুরু করে।
ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন ইউনূস
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ঢাকার জনবহুল এলাকায় নির্বাচনী প্রচার করার সময় প্রকাশ্যে সভায় গুলিবিদ্ধ হন বাংলাদেশের ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওরফে আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম মুখ শরিফ ওসমান হাদি। অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক থাকায় তড়িঘড়ি গত সোমবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উন্নত চিকিৎসার জন্য হাদিকে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠায়। কিন্তু ট্রিটমেন্ট করা হলেও সেখানে তিনি মারা যান। গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে টিভিতে সম্প্রচারিত এক ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস হাদির মৃত্যুর কথা ঘোষণা করেন এবং তার হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দেন। আর তাতেই জ্বলে ওঠে বাংলাদেশ। লাগামছাড়া অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে দিকে দিকে। এমনকি চারিদিকে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। জানা গিয়েছে ঢাকা-সহ বিভিন্ন শহরে রাতভর তাণ্ডব করেছে ওসমান-পন্থীরা।
কী জানিয়েছেন মহম্মদ ইউনূস?
বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস হাদির মৃত্যুর কথা ঘোষণার সময়ে বলেন,”আজ, আমি আপনাদের সামনে অত্যন্ত হৃদয়বিদারক একটি খবর নিয়ে হাজির হয়েছি। জুলাই বিদ্রোহের নির্ভীক সম্মুখ যোদ্ধা এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি আর আমাদের মধ্যে নেই। এরপর তিনি এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “খুনিদের প্রতি কোনও ধরনের সহনশীলতা দেখানো হবে না। আমি সকল নাগরিককে আন্তরিকভাবে আহ্বান জানাচ্ছি – ধৈর্য এবং সংযম বজায় রাখুন। রাষ্ট্র আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
সংবাদপত্র অফিসে হামলা আন্দোলনকারীদের
প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস হাদির মৃত্যুর খবর ঘোষণা করতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কাছে শাহবাগ মোড়ে শত শত শিক্ষার্থী এবং মানুষ জড়ো হন ৷ তাঁরা স্লোগান দিতে থাকেন, “তুমি কে, আমি কে – হাদি, হাদি।” এছাড়াও বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র প্রধান কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। জানা গিয়েছে, আচমকা একদল লোক এসে জোর করে ঢুকে পড়ে প্রথম আলোর অফিসে এবং আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় কার্যালয়ে। দমকলে খবর দেওয়া হলে কোনরকমে ক্রেনের সাহায্যে কার্যালয়ের উপর থেকে কর্মীদের উদ্ধার করা হয়। ভাঙচুর চালানো হয় বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে আওয়ামি লিগের দফতরগুলিতে। এছাড়াও ডেইলি স্টারের অফিসেও অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয়।
রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ইউনূসের
রিপোর্ট মোতাবেক আগামীকাল অর্থাৎ শনিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস। তিনি জানিয়েছেন সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্ব-শাসিত অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। এবং আজকে নামাজের পর দেশের প্রতিটি মসজিদে হাদির আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। হাদির মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতে ইসলামি।
আরও পড়ুন: বেসরকারি কর্মীদের এবার বেশি লাভ, EDLI স্কিম নিয়ে বড় ঘোষণা EPFO-র
প্রসঙ্গত, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন। কিন্তু তার আগে ফের আরও একবার নতুন করে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। চারিদিকে আগুন লেগে যাওয়ায় সবকিছু যেন ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, ফিরে এসেছে শেখ হাসিনার আমলের গত বছরের জুলাই আগস্টের স্মৃতি। এদিকে এই ঘটনায় দিকে দিকে আবার ভারত বিরোধী স্লোগান তুলছেন অনেকে। কট্টরপন্থীরা বৃহস্পতিবার রাতেই ভারতীয় সহকারী-হাইকমিশনারের বাসভবনের সামনে ইটপাটকেল ছোড়ে। তাই এই অশান্তির দিকে নজর রাখছে ভারত।