প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ফের রাজ্যের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ বিচারপতি! রাজ্যের পদক্ষেপে এবার আইনের সম্মানে লাগল বড় আঘাত! সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর ভ্রাতৃবধূ তথা রানি বিড়লা গার্লস কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের শো-কজ নোটিসকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই কলেজের অধ্যক্ষ। আর সেই মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেওয়াকে কেন্দ্র করে রাজ্য এবং বিচারপতির মধ্যে নজিরবিহীন জেদাজেদি দেখা গেল কলকাতা হাইকোর্টে।
ঘটনাটি কী?
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রাতৃবধূ তথা রানি বিড়লা গার্লস কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের শোকজ নোটিসকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই কলেজেরই অধ্যক্ষা শ্রাবন্তী ভট্টাচার্য। অভিযোগ উঠেছিল যে ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর রানি বিড়লা গার্লস কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য হিসেবে আভেরি গুহকে মনোনীত করার পাশাপাশি ওই বছরেই ওই কলেজের প্রিন্সিপাল হিসাবে শ্রাবন্তীকে নিযুক্ত করা হয়। এদিকে চলতি বছর জুন মাসে ওই কলেজের সভাপতি হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর ভ্রাতৃবধূ তথা তৃণমূলের কাউন্সিলর কাজরীকে মনোনীত করা হয়।
শো-কজকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে মামলা
গত ১১ জুন রানি বিড়লা গার্লস কলেজের অধ্যক্ষা শ্রাবন্তী ভট্টাচার্য কলেজের পরিচালন সমিতির নির্বাচনের তারিখ ঠিক করলে, কাজরী নির্দেশ দেন নির্বাচন না করে মনোনয়নের ভিত্তিতে গভর্নিং বডি গঠন করার। আর তাতেই সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন প্রিন্সিপাল। পরে অধ্যক্ষাকে শো-কজ করেন সভাপতি কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ওই শো-কজকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন কলেজের অধ্যক্ষা শ্রাবন্তী। কিন্তু এই মামলা নিয়ে শুরু হল হুলুস্থুল কাণ্ড। গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার মামলার শুনানিপর্ব শেষের পরে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু ও রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তের মধ্যে জেদাজেদি দেখা গেল।
অন্তর্বর্তী নির্দেশ নিয়ে জেদাজেদি রাজ্যের
কলকাতা হাইকোর্টের তরফে জানানো হয়েছে যে, শো কজ মামলার শুনানির সময় মামলাকারী শ্রাবন্তী ভট্টাচার্যের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী নির্দেশের আর্জি জানানো হয়েছিল। সেই মতো মামলার শুনানি শেষে বিচারপতি বসু অন্তর্বর্তী রায় ঘোষণা শুরু করেছিলেন। কিন্তু সে সময় রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত আপত্তি করেন। এজির দাবি, তাঁর সওয়াল এখনও শেষ হয়নি। তাঁর আবেদন, এই মামলাটি থেকে বিচারপতি বসু যেন অব্যাহতি নেন। বিচারপতি বসুর প্রস্তাব, রায়ের প্রতিলিপিতে এখনও স্বাক্ষর হয়নি। এজি চাইলে আরও সওয়াল করতে পারেন। কিন্তু তার পরেও কিশোর দত্ত এই মামলা থেকে বিচারপতিকে সরে যাওয়ার জন্য জেদ করেন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিচারপতি বসু।
ক্ষুব্ধ বিচারপতি
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু মামলা প্রসঙ্গে রাজ্যের এই আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে জানান, “ রাজ্যের এই অবস্থান অত্যন্ত দুঃখজনক। অন্তর্বর্তী নির্দেশ নিয়ে গত ৬ আগস্ট শুনানি শুরু হয়েছিল। মামলাকারীর আইনজীবী সওয়াল শুরু করেছিলেন। রাজ্য শুনানি মুলতুবির আবেদন করলে আবার ৭ আগস্ট শুনানির জন্য রাখা হয়। সে দিনও মামলা পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করা হয়। এর পরে গত ১১ আগস্ট শুনানির দিন ধার্য করা হয়। ওই দিন রাজ্য-সহ সব পক্ষের বক্তব্য শুনে আজ অন্তর্বতী নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল!” এরপরেই এ মামলা থেকে অব্যাহত হন তিনি।
আরও পড়ুন: ৩০ দিন গারদে থাকলে পদ খোয়াবেন মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী! নয়া আইন আনছে কেন্দ্র
এদিন এই মামলাকে ঘিরে বিচারপতির বিরুদ্ধে রাজ্যের এই আচরণে বিরোধীরাও বেশ ক্ষুব্ধ। মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য রাজ্যের এই জেদ মেনে নিতে পারেনি বিজেপি নেতা তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। তিনিও তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন। এদিকে বিচারপতি বসু এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন যে, “আজকের এই পরিস্থিতি একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি। যা এই আদালতের মর্যাদাকে গভীরভাবে আঘাত করেছে। তবুও, যখন কোনও পক্ষ এই আদালতের প্রতি আস্থা রাখতে ব্যর্থ হয়, তখন মামলাটি ছেড়ে দেওয়াই ভাল। কারণ, বিচার শুধু হতে হবে তা নয়, বিচার হচ্ছে তা দেখাতেও হবে।’’ খুব শীঘ্রই সম্পূর্ণ ঘটনা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে জানানো হবে বলে জানা গিয়েছে।
Today’s incident is a naked example of the depths to which the politics of West Bengal has fallen.
In the case concerning the Principal of Rani Birla Girls’ College, since the Chief Minister’s sister-in-law Kajari Bandopadhyay was directly involved, the State government… pic.twitter.com/mlDCnwtgbj
— Tarunjyoti Tewari (@tjt4002) August 19, 2025