কাটছে না জেলের অন্ধকারময় স্মৃতি! বাড়িতে চেয়ারে বসেই নির্ঘুম রাত কাটালেন পার্থ

Partha Chatterjee

প্রীতি পোদ্দার, নাকতলা: গত সোমবার বিচারকের তরফে জেলমুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেই মতো গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার দুপুরে জেল মুক্তি হল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee)। দুপুর ২টো ২০ নাগাদ বাইপাসের ধারের হাসপাতাল থেকে হুইলচেয়ারে চেপে নীলের উপর সাদা ফুলছাপ পাঞ্জাবি পরে বাইরে বেরিয়ে আসতেই হাসপাতাল চত্বরে অনুগামীরা স্লোগান তোলেন ‘পার্থদা জিন্দাবাদ’। সকলের সামনে প্রায় কেঁদে ফেলেন তিনি। এরপর ভিড় কাটিয়ে নাকতলার বাড়িতে যান তিনি। বরণ করে পার্থর গৃহপ্রবেশ করান তাঁর আত্মীয়রা। কিন্তু প্রায় সাড়ে ৩ বছর পর নিজের বাড়িতে এসেও তাঁর শান্তির ঘুম হল না। জেলের মতই বাড়িতেও সময় কাটল পার্থর।

প্রায় সাড়ে তিনবছর পর জেলমুক্তি পার্থর

উল্লেখ্য, নিয়োগ মামলায় ২০২২ সালের ২৩ জুলাই কলকাতার নাকতলার বাড়ি থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট কয়েক মাস আগেই বলে দিয়েছিল যে, সিবিআইয়ের মামলায় বিচারপর্ব শুরু হলেই পার্থ, এসএসসির তৎকালীন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য ও উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহের শর্তাধীন জামিন মঞ্জুর করা যাবে। সেই মতো সোমবার এই মামলায় অষ্টম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ হতেই আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক পার্থকে জেলমুক্ত করার নির্দেশ দেন। প্রায় সাড়ে তিনবছর পর মুক্তির স্বাদ পেয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বাড়িতে পরিবারের সদস্য, প্রিয় পোষ্যদের সঙ্গে সময় কাটান দিনভর এমনকি কথাও বলেন দলীয় কর্মীদের সঙ্গে। মনে মনে বাড়ি ফেরার আনন্দ এবং শান্তি উপভোগ করলেও এদিন তিনি রাতে খানিক চিন্তা নিয়েই ঘুমোতে পারলেন না।

বাড়িতেও রাত জাগলেন পার্থ

আজ অর্থাৎ বুধবার, সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখোমুখি হন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ঘুম হয়নি। অস্বস্তি হয়েছে সারারাত। চেয়ারেই ঘুমোনোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু হল না।” কেন এই অস্বস্তি পার্থকে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বললেন, “এতগুলো দিন তো জেলে চেয়ারে বসেই রাত কেটেছে। অভ্যাস…।” একথা বলতে গিয়েই যে পার্থর দুচোখ বেয়ে জল উপচে পরে। কিন্তু নিজেকে শক্ত করে শেষে নিয়োগ মামলার দুর্নীতি প্রসঙ্গে চক্রান্তের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “ মন্ত্রী থাকাকালীন সবসময় সততার সঙ্গেই কাজ করে এসেছিলাম। নিশ্চয় কোনও অপরাধ বিগত দিনে করেছি। তাই এই হাল, যদিও আমার জীবনের কালো সময় পেরিয়ে এলাম।” ফের কথা বলতে বলতে কেঁদে দিয়ে বললেন, “ পোষ্য কুকুরগুলো আছে আর ভাই, এইভাবে সময়টা কেটে গেল…।”

আরও পড়ুন: SIR বিতর্কের ঝড় উঠল নবদ্বীপে! অন্তত ৬০ ভোটারের বাবা এক, কী বলছে কমিশন?

প্রসঙ্গত, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ‌্যায়ের জেলমুক্তির পরই আশার আলো জ্বলল শান্তিনিকেতনের ‘অপা’ বাড়িতে। নিস্তব্ধতা কাটিয়ে বাড়ির পরিচারকেরাও বেশ খুশি। কারণ বাড়ি আগলে রাখলেও বহু বছর তাঁদের জোটেনি কোনো পারিশ্রমিক, কিন্তু পার্থর কেলমুক্তি হতেই এবার কাটতে চলেছে অনটনের দিন। পরিচারক দম্পতি নিখিল দাস ও ঝর্ণা দাসের আশা রাখি যে সব হয়তো আবার আগের মতন হতে যাবে। শীতের বাগানে আবার গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, অ্যাস্টার, ডেইজি, প্যানসি, ন্যাস্টারশিয়াম আর ক্যালেন্ডুলা ফুলে ভরে উঠবে।

Leave a Comment