প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: এই মুহুর্তে ভিন রাজ্যে বাংলা-বাংলাদেশি ভাষা বিতর্কের জেরে উত্তপ্ত গোটা রাজনৈতিক মহল। এবার দিল্লি পুলিশের পাশে এসে দাঁড়ালেন বিজেপির প্রাক্তন BJP রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তৃণমূলকে কটাক্ষ করে জানিয়ে দিলেন বাংলা ভাষা এবং বাঙালি কারোর পৈতৃক সম্পত্তি নয়। তবে এতেও বিতর্ক থামছে না। দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে এই ইস্যুতে লাগাতার সামালেচানার পথে হেঁটে চলেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসও।
বাংলা ভাষা বিতর্কে বিস্ফোরক দিলীপ ঘোষ
সম্প্রতি দিল্লির পুলিশ আধিকারিকের একটি চিঠি নিয়ে চরম বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছিল, বাংলা ভাষার একজন অনুবাদকের প্রয়োজন তাদের। কারণ, সম্প্রতি ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে ৮ জনকে আটক করে দিল্লি পুলিশ। তাদের কাছ থেকে যে নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে, তা সবটাই বাংলা ভাষায় লেখা। সেই নথিগুলির তথ্য যাচাইয়ের জন্য একজন বাংলা অনুবাদকের খোঁজ চলছে। শুধু তাই নয় ওই চিঠিতে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে উল্লেখ করায় রাজনৈতিক শিবিরে তৈরি হয়েছে মহা বিভ্রাট।রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, ওই চিঠিতে বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশিদের ভাষা বলে চিহ্নিত করেছিল দিল্লি পুলিশ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেউ বাদ যায়নি বিজেপি এবং দিল্লি পুলিশকে কটাক্ষ করতে। এবার সেই নিয়ে সরাসরি মুখ খুললেন বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
ভাইরাল সেই ভিডিও
বাংলা এবং বাংলাদেশি ভাষা নিয়ে বিতর্কে এবার দিল্লি পুলিশের পাশেই দাঁড়ালেন প্রাক্তন BJP রাজ্য সভাপতি। আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার, বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে একটি ভিডিও পোস্ট করেন যেখানে কিছু সাংবাদিক তাঁকে ভিন রাজ্যে বাংলা ভাষার অপমান নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন যার জবাবে তিনি বলেছিলেন যে, “ বাংলা বা বাঙালি এবং বাংলা ভাষা আমার পৈতৃক সম্পত্তি নয়। এমনকি তৃণমূল কংগ্রেসেও সম্পত্তি নেই, তাঁদের কোনো কন্ট্রিবিউশনও নেই। এমনকি বাংলা ভাষা যে ধ্রুপদী ভাষার তকমা পেয়েছে তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের। সেক্ষেত্রে বঙ্গবাসী বাংলা ভাষা ছাড়াও ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে পছন্দ করেন, কোন ক্ষেত্রেই তাঁরা মনে করেন না যে বাংলা ভাষা সংকটে পরে যাচ্ছে। ”
1.1 The Bengali language is neither my personal property nor that of TMC leaders.
If Bengali has received the status of a classical language, the biggest credit goes to Narendra Modi & his govt.
The people of West Bengal are well aware and conscious about the Bengali language. pic.twitter.com/AIDucouR01— Dilip Ghosh (Modi Ka Parivar) (@DilipGhoshBJP) August 5, 2025
সরাসরি নিশানা করা হল শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে
বাংলা-বাংলাদেশি ভাষা বিতর্কের দলের নীতি অনুসরণ করে দিল্লি পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে এদিন দিলীপ ঘোষ সেই ভাইরাল ভিডিওতে আরও জানিয়েছেন যে, “ নতুন লোক বঙ্গে এসে যদি এখানে হিন্দিতে কথা বলে, গ্রামের মহিলারাও ভাঙাচোরা হিন্দিতে কথা বলে, সেক্ষেত্রে বাংলা ভাষার কোনো অপমান হচ্ছে না। সুতরাং বাংলাকে তৃণমূল রক্ষা না করলেও চলবে, বাঙালিরাই তাঁদের রক্ষা করতে পারবে।” এদিন তিনি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে নিয়েও একাধিক কটাক্ষ করেছিলেন। তিনি বলেছেন ব্রাত্য বসুর যদি কোনো মান সন্মান থাকত তাহলে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার এমন হাল হত না।” তাঁর মতে বাংলায় যদি SIR প্রথা চালু হয় তাহলে বিহারের থেকেও দ্বিগুণ ভুয়ো ভোটার বাতিল হবে।
আরও পড়ুন: জীবনযুদ্ধে হার, ৭৯ বছর বয়সে প্রয়াত জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক
উল্লেখ্য, দিল্লি পুলিশের এহেন কাণ্ডে বিজেপি কোনও দোষ দেখছেন না। রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যর বক্তব্য ছিল, “আপনি বাংলাদেশের একটা বই আর পশ্চিমবঙ্গের একটা বই পাশাপাশি রাখুন, আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন, কোনটা সুবোধ সরকার লিখেছেন, আর কোনটা বাংলাদেশের সফিকুল ইসলাম লিখেছেন। সুতরাং বাংলা ভাষায় কথা বললেই সে ভারতবাসী হয়ে যাবে, বাংলা ভাষায় কথা বললেই তার নামটা ভোটার লিস্টে রেখে দিতে হবে, এটা হতে পারে না।”