প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: রাজ্যের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা DA-র ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দিতে অনেক আগেই রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এর জন্য ঘোষণা জারি করার পরবর্তী ছ’সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সময় এগোতে লাগলেও রাজ্য কোনো রকম পদক্ষেপ নেয়নি। শেষে ওই সময়সীমার মধ্যে রাজ্য টাকা দিতে পারেনি। এবং উল্টে আদালতের কাছ থেকে আরও ছ’মাস সময় চাওয়া হয়। আর সেই আবেদনের ভিত্তিতে গত সোমবার অর্থাৎ ৪ আগস্ট থেকে শুনানি শুরু হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। আর তাতেই একের পর এক চরম ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছে রাজ্যকে।
সোমবার থেকে শুরু হয়েছে শুনানি
সংবাদ প্রতিদিনের রিপোর্ট অনুযায়ী, সোমবারের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি পিকে মিশ্রের বেঞ্চে রাজ্যকে প্রশ্ন করেছিল যে কেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রাজ্যকে ২৫ শতাংশ DA দিল না সরকার? জবাবে রাজ্যের আইনজীবী জানান, ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ মেটাতে হলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। সেই অর্থ জোগাড় করতে সময় লাগবে। এখানেই শেষ নয়, রাজ্যের তরফে মূলত তিনটি যুক্তি দেওয়া হয়। এক, ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার নয়। দুই, ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আইনি অধিকার নেই। এবং তিন, রাজ্য অবস্থা বুঝে সব দিক বিবেচনা করে DA দেয়। আর সেই যুক্তিতেই ফের প্রশ্নের পাহাড় তুলে ধরলেন বিচারপতিরা।
DA দেওয়ার বাজেট নেই কোষাগারে
রাজ্যের আইনজীবীর যুক্তির নিরিখে সুপ্রিম কোর্ট সরাসরি প্রশ্ন করে রাজ্য কীসের ভিত্তিতে DA দিতে চায়? পাশাপাশি রাজ্যের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে বিচারপতি পিকে মিশ্র বলেন, “ভোক্তা মূল্য সূচক বা সিপিআই মেনে না-দিলে কোন অঙ্কে ডিএ দিতে চায় রাজ্য? অন্যদিকে মঙ্গলবার মামলার শুরুতেই রাজ্যের আইনজীবী শ্যাম দেওয়ান ফের স্পষ্ট জানান, কোনও আইন বা নিয়মে মহার্ঘ্যভাতাকে মৌলিক অধিকার হিসাবে উল্লেখ করা নেই। এমনকি আইনজীবী কপিল সিবল এও বলেন যে, ১০০% ডিএ মিটিয়ে দিতে হলে যত পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা রাজ্যের বাজেটে নেই রাজ্যকে রিজার্ভব্যাঙ্কের কাছে ধার করতে হবে। সেটাও খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এরপর আবার বিধানসভায় বিল পাশ করিয়ে তবে পাওয়া যাবে ঋণ। তাছাড়া কেউ রাজ্যকে ঋণ নিতে বাধ্যও করতে পারে না।
রাজ্যে DA নিয়ে বৈষম্য বাড়ছে
গতকাল, বুধবারও ফের রাজ্য সরকারি কর্মীদের DA মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি পিকে মিশ্রের বেঞ্চে। এদিন মূলত সরকারকে দোষারোপ করারই চেষ্টা করেন মামলাকারীরা। রাজ্য সরকারি কর্মীদের আইনজীবী গোপাল সুব্রহ্মণ্যমের দাবি, “DA ইচ্ছা অনুযায়ী দেওয়া যায় না। নির্দিষ্ট সময়মতো দিতে হয়। এটা সরকারের নীতির মধ্যে পড়ে। যেখানে দিল্লির বঙ্গভবন এবং চেন্নাইয়ের ইয়ুথ হস্টেলে কর্মরত রাজ্য সরকারি কর্মীরাও ডিএ পান AIPCI অনুযায়ী সেখানে পশ্চিমবঙ্গে কর্মরত অন্য সরকারি কর্মচারীরা সেই হারে DA পাচ্ছেন না। যা অত্যন্ত বৈষম্য।
আরও পড়ুন: মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে কমিশন! আধিকারিক সাসপেন্ড নিয়ে সংঘাত চরমে
আজও DA মামলার শুনানি
মামলাকারীদের পক্ষের আর এক আইনজীবী পিএস পাটোয়ালিয়া দাবি করেন, “ AIPCI প্রতি মাসে পরিবর্তন হয়। কিন্তু প্রতি মাসে DA পাল্টানো সম্ভব নয়। সেই কারণে কেন্দ্রীয় সরকার বছরে দু’বার ডিএ দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। আগে রাজ্য সরকারও বছরের দু’বার এমন করত। পরে তারা বছরে এক বার DA দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এখন DA দেওয়ার কথা বলছেই না রাজ্য। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে বকেয়া DA কিস্তিতে দেওয়া হোক। আমরা তাতেই প্রস্তুত।’’ আজ বৃহস্পতিবারও শুনানি হবে। আজ মামলাকারীর পক্ষের আইনজীবীদেরও যদি কিছু বলার থাকে, তা-ও আদালতে জানাতে পারবেন তাঁরা। আজই শুনানি শেষ হওয়ার কথা। তার পরে শীর্ষ আদালত কী বলে, সেই দিকে তাকিয়ে সরকারি কর্মচারীরা এবং রাজ্য সরকার।