সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার মুখে পড়ল আমেরিকার অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান F-35 (F-35 Crash)! হ্যাঁ, সম্প্রতি আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি F-35 যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়েছে। তবে বড় খবর এই যে, পাইলট নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। এমনকি কিছুদিন আগে এই একই F-35 বিমান দক্ষিণ ভারতের কেরলে জরুরি অবস্থা অবতরণ করেছিল।
আর ঠিক তার পরেই আমেরিকায় এরকম বিপর্যয় এবার প্রশ্নচিহ্ন দাঁড় করাচ্ছে। যুদ্ধবিমান F-35 কি তাহলে সত্যিই বিশ্বাসেরা? সত্যিই কি প্রযুক্তিগতভাবে এটি পারফেক্ট? নাকি প্রচারের জন্যই সাফল্য? চলুন এ বিষয়ে একটু খতিয়ে দেখা যাক।
কেন এই দুর্ঘটনা?
প্রসঙ্গত, আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া এই দুর্ঘটনাটি কোনোরকম যুদ্ধক্ষেত্রে হয়নি। বরং সাধারণ প্রশিক্ষণের সময়ই ঘটেছে। জানা গিয়েছে, পাইলট বিমানটি থেকে বেরিয়ে আসার সময় প্যারাসুটের সাহায্যে বেঁচে যান। এই ধরনের বিমান, যা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিয়ে তৈরি, সেখানে কীভাবে যান্ত্রিক ত্রুটি হতে পারে, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। যদিও এর আগে কেরালার একটা বিমান ঘাঁটিতে এমার্জেন্সি ল্যান্ডিং করতে হয় এই F-35 বিমানকে। তখনও পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েকটা দিন লেগে গিয়েছিল।
A US Navy F-35 fighter jet crashes in central California near Naval Air Station Lemoore, according to a Navy press statement.
The pilot ejected safely, and the cause of the crash, which occurred around 6:30 pm, is under investigation, the statement said.
A local EMS crew was at… pic.twitter.com/axpGUTVUOc
— Breaking Aviation News & Videos (@aviationbrk) July 31, 2025
F-35 আসলে কী?
জানিয়ে রাখি, F-35 হল আমেরিকায় প্রতিরক্ষা সংস্থা Lockheed Martin-এর তৈরি একটি আধুনিক যুদ্ধবিমান। আর এটি একেবারে পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার জেট। এটি মূলত তিনটি ভিন্ন ধরনের মডেলে তৈরি করা হয়েছে। F-35A, যা সাধারণ রানওয়ে থেকেই উঠতে পারে, F-35B, যা ছোট রানওয়ে এবং ভার্টিক্যাল ল্যান্ডিং থেকে উঠতে পারে আর F-35C, যা নৌবাহিনীর এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার থেকে উঠতে পারে।
তবে এই বিমানের সবথেকে বড় শক্তি হল, এর স্টেলথ টেকনোলজি। হ্যাঁ, এটিকে শত্রুপক্ষের রাডারে ধরা প্রায় অসম্ভব। এমনকি এই বিমান শত্রুঘাঁটির উপর দিয়ে উড়ে গেলেও টের পাওয়া যায় না। আর এতে রয়েছে AESA রাডার, DAS সিস্টেম এবং ইলেকট্রো অপটিক্যাল টার্গেটিং সিস্টেম, যেগুলি মিলিয়ে পাইলটকে 360 ডিগ্রি যুদ্ধক্ষেত্রের ছবি দিয়ে থাকে।
গতির দিক থেকে কেমন এই বিমান?
উল্লেখ্য, F-35 বিমানটি সর্বোচ্চ 1.6 Mach স্পিডে উড়তে পারে। অর্থাৎ ঘন্টায় 1200 মাইল যেতে পারে। আর একসাথে 18000 পাউন্ড পর্যন্ত অস্ত্র বহন করতে পারে এটি। তবে শুধুমাত্র আকাশে নয়, বরং মাটিতেও আক্রমণ হানতে পারে F-35। এমনকি ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার বা তথ্য আদান প্রদানেও এটি কাজ করে।
কোন কোন দেশ বর্তমানে F-35 ব্যবহার করছে?
এই যুদ্ধবিমান শুধুমাত্র আমেরিকার জন্য নয়, বরং বিশ্বের অন্তত 20টি দেশ এর উপর ভরসা রেখেছে। তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যাদের 2500টির বেশি অর্ডার রয়েছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যের কাছে রয়েছে 48টি F-35 অর্ডার, আর পরিকল্পনা রয়েছে 138টি।
আরও পড়ুনঃ ১৭ বছর পর রায়! মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় বেকসুর খালাস সাধ্বী প্রজ্ঞা-সহ সকল অভিযুক্ত
পাশাপাশি ইতালি ইতিমধ্যেই 20টি বিমান পেয়েছে, আর মোট 75টি অর্ডার দিয়ে রেখেছে। জাপানের কাছে রয়েছে 105টি F-35A এবং 42টি F-35B। ইজরাইলের কাছে রয়েছে তাদের নিজস্ব সংস্করণ F-35I এবং মোট 75টি পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, নেদারল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, ডেনমার্ক ও কানাডা সহ বিভিন্ন দেশ এই বিমান ব্যবহার করছে।
তবে এতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও এ নিয়ে বিতর্ক থেমে নেই। কারণ এই বিমানের এক একটি ইউনিট তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতেই প্রায় 2 ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে। তাছাড়া মাঝে মাঝে ডেলিভারি বিলম্ব, টেকনিক্যাল ফল্ট, দুর্ঘটনার কারণে F-35 নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।