প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: সময় যত এগোচ্ছে চিংড়িঘাটা মেট্রো প্রকল্পের (Chingrighata Metro Work) জট আরও গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের নির্দেশে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, উৎসবের মরশুম মিটে গেলে নভেম্বরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহের শুক্র থেকে রবিবার রাতে ট্রাফিক ব্লক নিয়ে কাজ শেষ করবে RVNL। কিন্তু পরে দেখা যায় রাজ্য সরকার সেই কাজ করেনি। তাতে এবার রাজ্য এবং কেন্দ্র পরস্পরের দিকে আঙুল তুলেই চলেছে। আর এই দোষারোপের কাণ্ডকারখানায় ফের ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্ট।
ট্রাফিক ব্লক নিয়ে চাপে রাজ্য সরকার!
উল্লেখ্য, চিংড়িঘাটা মেট্রো সম্প্রসারণ বহুদিন ধরেই আটকে। নিউ গড়িয়া–বিমানবন্দর মেট্রো প্রকল্পের বেলেঘাটা থেকে গৌরকিশোর ঘোষ স্টেশনের মধ্যবর্তী অংশের কাজ এখনও থমকে। কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশনের দাবি, রাস্তা বন্ধের অনুমতি না মেলাতেই কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। নভেম্বরে কাজ শুরুর কথা থাকলেও তার কিছুই হয়নি। এই নিয়ে গত সোমবার রাজ্যের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল ও বিচারপতি পার্থসারথি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ। নির্দেশ দেওয়ার পরেও কেন এগোয়নি কাজ সেই প্রশ্ন তুলে বৃহস্পতিবারের মধ্যে রাজ্যকে নতুন করে আদালতকে নয়া দিনক্ষণ জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। গতকাল সেই মামলা উঠলে ফের কড়া বার্তা দেয় হাইকোর্ট।
চিংড়িঘাটা মেট্রো নিয়ে কড়া বার্তা কলকাতা হাইকোর্টের
চিংড়িঘাটা মেট্রো নিয়ে জট কোনওভাবেই কাটছে না। রাজ্য সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের যুক্তি রাস্তা বন্ধ করে কাজ হলে সাধারণ মানুষকে অসুবিধায় পড়তে হবে, এবার সেই যুক্তি নিয়ে ফের রাজ্যকে কড়া বার্তা দিল হাইকোর্ট। রিপোর্ট মোতাবেক গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পালের বেঞ্চে মেট্রো মামলাটি উঠলে রাজ্যকে বলেন, “কোভিড যদি আবার ফেরত না আসে, তাহলে রাস্তায় গাড়ির চাপ কোনওদিনই কমবে না। খোলা মনে আলোচনায় বসুন, সমাধান সূত্র বেরোবে।”
দ্রুত আলোচনার নির্দেশ আদালতের
হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পালের বেঞ্চ নির্দেশ দেওয়ার পরই রাজ্যের পাল্টা বক্তব্য, সাবওয়ের কাজ না হলে সমস্যায় পড়বেন সাধারণ মানুষ। এ কথা শুনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, “কোনও না কোনওদিন তো কাজ করতে হবে, সেদিন তো যান নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে।” সব পক্ষকে তাই দ্রুত আলোচনার টেবিলে বসে সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এর আগে এই মেট্রোর কাজ নিয়ে এক স্থানীয় বাসিন্দা জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিল, সেই ভিত্তিতেই আদালত একাধিক বৈঠক ডেকেছিল। তখন রাজ্য সরকার এবং পুলিশের তরফে সহযোগিতার আশ্বাস মিলেছিল। কিন্তু বাস্তবে প্রশাসনের অনুমতি মেলেনি বলেই দাবি আবেদনকারীর।
আরও পড়ুন: রাতের অন্ধকারে বাইকের পিছনে ধাক্কা ট্রাকের, পথদুর্ঘটনায় মৃত্যু কলকাতা পুলিশের ASI-র
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে মেট্রোর কাজ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে রাজ্য সরকারকেই কড়া ভাবে দোষ দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। লোকসভায় তিনি বলেছেন যে আটকে থাকা মেট্রোর কাজ নিয়ে জট কাটাতে রাজ্য সরকারকেই পদক্ষেপ করতে হবে। এছাড়াও তিনি আরও জানিয়েছেন, যদি রাজ্য নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দেয়, তাহলে রাতে আট ঘণ্টা করে কাজ করলে মাত্র তিন দিনেই কাজ শেষ করা সম্ভব চিংড়িহাটায়। কিন্তু এখনও সেই কাজ নিয়ে কোনো আলোচনা হচ্ছে না। এখন দেখার, চিংড়িঘাটার দীর্ঘস্থায়ী জট কোন পথে কাটে।