সহেলি মিত্র, কলকাতাঃ রেশন গ্রাহকদের (Rationing) জন্য রইল খারাপ খবর। এবার পশ্চিমবঙ্গ সহ বহু রাজ্যের রেশন গ্রাহকদের রেশনে বরাদ্দ চালের পরিমাণ কমাতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। চালের পরিমাণ কমিয়ে বেশি করে গম দিতে পারে সরকার বলে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে। হ্যাঁ একদম ঠিক শুনেছেন।
চালের পরিমাণ কমিয়ে এবার রেশনে বেশি গম দেবে সরকার!
পশ্চিমবঙ্গের কথা বললে, রাজ্যে এখন গ্রাহকরা মোট খাদ্যশস্য বরাদ্দের ৪০ শতাংশ গম ও ৬০ শতাংশ চাল পান। মাসে মাথাপিছু মোট ৫ কেজি বরাদ্দের মধ্যে ৩ কেজি চাল এবং ২ কেজি গম দেওয়া হয়। তবে এবার পরিবর্তিত ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার ৫৯.৫ শতাংশ গম এবং ৪০.৫ শতাংশ চাল সরবরাহ করবে এনএফএসএ গ্রাহকদের। অর্থাৎ তখন গ্রাহকরা প্রায় ৩ কেজি করে চাল ও ২ কেজি করে গম পাবেন। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বিহার, দিল্লি মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ুর ক্ষেত্রে এটা করতে চাইছে। আর এরকম যদি হয় তাহলে অনেক মানুষের সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা।
এর কারণ বহু রেশন গ্রাহক এমন আছেন যারা কিনা গমের বদলে চালটা নিতেই পছন্দ করেন। এহেন পরিস্থিতিতে সরকার যদি চালের বদলে বেশি করে গম দেয় তাহলে সমস্যা হতে পারে বলে অনেকের ধারণা। এদিকে নিশ্চয়ই ভাবছেন যে সরকার কেন এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে? তাহলে জানিয়ে রাখি, সরকার সেক্ষেত্রে খরচ বাঁচাতে চাইছে। চালের বদলে গম দিলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচুর আর্থিক সাশ্রয় হবে।
খরচ বাঁচাতে উদ্যোগী কেন্দ্র
কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রক এই সংক্রান্ত যে নোট তৈরি করেছে তাতে কেন্দ্রের কত টাকা বাঁচবে সেটা উল্লেখ করা হয়েছে। এনএফএসএ প্রকল্প খাতে এতে কেন্দ্রের মাসে ৩০৪ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা সাশ্রয় হবে। একবছরে মোট ৩,৬৫৪ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা বাঁচবে। ‘টাইড ওভার স্কিমে’ কেন্দ্রীয় সরকার কয়েকটি রাজ্যকে কম দামে চাল-গম সরবরাহ করে। সেখানেও চাল কমিয়ে, গমের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে। এই খাতে সাশ্রয় হবে বছরে ২৪৯ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে কয়েকটি রাজ্যকে চালের পরিমাণ কমিয়ে গম বৃদ্ধি করলে কেন্দ্রে বছরে ৩,৯০৪ কোটি টাকা বাঁচবে।
এক টন চাল উৎপাদন করতে সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের খরচ পড়ে ৪১ হাজার ৭৩৩ টাকা। যেখানে সেই একই পরিমাণ গমের জন্য খরচ ২৯,৮০০ টাকা।
আর রেশন পাবেন না কয়েক লক্ষ গ্রাহক
দেশে এখনও অনেক পরিবার আছে যারা আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে দু’বেলা খাবারও জোগাড় করতে পারছে না। এই অভাবী ব্যক্তিদের ত্রাণ প্রদানের জন্য, সরকার জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন (NFSA) এর অধীনে বিনামূল্যে এবং সস্তা রেশন সরবরাহ করে। তবে, এই সুবিধা পেতে রেশন কার্ড প্রয়োজন। সম্প্রতি, এটি প্রকাশ পেয়েছে যে রেশন কার্ডের তালিকা থেকে ব্যাপকভাবে নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে, যাতে কেবলমাত্র যারা সত্যিকার অর্থে যোগ্য তারাই এই সুবিধা পেতে পারেন।
দেশব্যাপী তদন্তের সময় অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। সরকার বিভিন্ন রাজ্যে সমীক্ষা চালিয়ে জানতে পেরেছে যে বছরের পর বছর ধরে মৃত ব্যক্তিদের নামে রেশন সংগ্রহ করা হচ্ছিল। অযোগ্য ব্যক্তিরাও এই প্রকল্পের সুবিধা নিচ্ছিলেন। অনেক পরিবার কেবল সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য কার্ড তৈরি করেছিল। এরকম নানা অনিয়ম রোধ করার জন্য, সরকার যাচাইকরণ জোরদার করেছে এবং গত কয়েক মাসে বিনামূল্যে রেশন তালিকা থেকে ২ কোটি ২৫ লক্ষ নাম বাদ দিয়েছে। কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রক বলছে যে এই প্রকল্পের সুবিধা কেবলমাত্র প্রকৃত অভাবীদের কাছে যাতে পৌঁছায় সেই ব্যবস্থা করা হবে।