সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: রাজ্য সরকার থেকে শুরু করে কেন্দ্র সরকার শিক্ষার্থীদের অর্থাভাব দূর করার জন্য একের পর এক জনকল্যাণমূলক প্রকল্প চালু করে রেখেছে। ঠিক তেমনই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পড়ুয়াদের জন্য চালু করেছে ঐক্যশ্রী প্রকল্প (Aikyashree Scholarship), যার মাধ্যমে রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা অর্থ সাহায্য পেয়ে থাকে। হ্যাঁ, প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে পিএইচডি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়। তবে এ নিয়ে আজ বড়সড় ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিস্তারিত জানতে পড়ুন প্রতিবেদনটি।
কারা ঐক্যশ্রী স্কলারশিপের যোগ্য?
জানিয়ে রাখি, এই প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করার জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। সেগুলি হল-
- আবেদনকারীকে অবশ্যই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে এবং পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- সরকারি অথবা সরকার সাহায্যপ্রাপ্ত রাজ্যের যে কোনও স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া হতে হবে।
- আবেদনকারীর নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে এবং তার সঙ্গে আধার কার্ড লিঙ্ক করতে হবে ।
- পূর্ববর্তী পরীক্ষায় কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাস করতে হবে।
- প্রি-ম্যাট্রিক স্কলারশিপ পেতে গেলে পরিবারের বার্ষিক আয় ২ লক্ষ টাকার মধ্যে হতে হবে। আর পোস্ট-ম্যাট্রিক স্কলারশিপ পেতে গেলে পরিবারের বার্ষিক আয় ২.৫ লক্ষ টাকার মধ্যে হতে হবে।
কোন স্কলারশিপ কাদের জন্য?
বলে রাখি, এই ঐক্যশ্রী স্কলারশিপের মধ্যে দুই ধরনের স্কলারশিপ পাওয়া যায়। আর সেগুলি হল প্রি-ম্যাট্রিক স্কলারশিপ, পোস্ট-ম্যাট্রিক স্কলারশিপ। মূলত প্রি-ম্যাট্রিক স্কলারশিপ প্রথম থেকে দশম শ্রেণীতে পাঠরত পড়ুয়াদের জন্য দেওয়া হয়। পোস্ট-ম্যাট্রিক স্কলারশিপ একাদশ, দ্বাদশ, স্নাতক, স্নাতকোত্তর, আইটিআই, ডিপ্লোমা, বিএড, ডিএলএড ইত্যাদি কোর্সের শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়।
কত টাকা স্টাইপেন্ড মেলে?
ঐক্যশ্রী স্কলারশিপে কোর্স বা শ্রেণীর উপর ভিত্তি করেই স্টাইপেন্ড দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বার্ষিক ১১০০ টাকা দেওয়া হয়। এরপর কোর্স অনুযায়ী টাকার অংক বাড়তে থাকে। এমনকি যারা কলেজে পড়বা, তারা বছরে ২৭,৫০০ টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকে।
আবেদন পদ্ধতি
ঐক্যশ্রী স্কলারশিপে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। এর জন্য https://wbmdfcscholarship.in/ ওয়েবসাইটে ভিজিট করে প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। তারপর শিক্ষার্থীর নিজের ব্যক্তিগত তথ্য এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করে আবেদন সেরে নিতে হয়। তবে হ্যাঁ, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট হিসাবে আয়ের শংসাপত্র, জাতিগত সার্টিফিকেট, চলতি শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়ার রিসিপ্ট, আগের পরীক্ষা মার্কশিট, আবাসিক সার্টিফিকেট, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের জেরক্স, পাসপোর্ট সাইজের ছবি ইত্যাদি রাখতে হয়।
আরও পড়ুন: পানীয়র অভাবে মরবে কাঙাল পাকিস্তান! ভারতের পর আফগানিস্তানও বন্ধ করছে জল
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বড়সড় ঘোষণা
এদিকে আজ এক্স হ্যান্ডেলে মুখ্যমন্ত্রী সংখ্যালঘু অধিকার দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেন, চলতি অর্থবর্ষে সংখ্যালঘু দফতরের প্ল্যান বাজেটের ১০ গুণের বেশি বাড়ানো হয়েছে। ২০১০-১১ সালে ৪৭২ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০২৫-২৬ সালে ৫৬০২ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করা হয়েছে। আর সংখ্যালঘু স্কলারশিপের ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে বাংলা। সর্বপ্রথম ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রাজ্য সরকার ঐক্যশ্রী স্কলারশিপ চালু করেছে, যেখানে ২০১১ সাল থেকে প্রায় ১০,২০৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে, আর ৪ কোটি ৮৫ লক্ষ সংখ্যালঘু এই স্কলারশিপ পেয়েছে।
সকলকে জানাই সংখ্যালঘু অধিকার দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা।
এটা আমার গর্ব, সংখ্যালঘু উন্নয়নে আমাদের সরকার অভূতপূর্ব কাজ করেছে এবং করে চলেছে।
সংখ্যালঘু দপ্তরের প্ল্যান বাজেট ১০ গুণের বেশি বৃদ্ধি করা হয়েছে – ২০১০-১১ সালের ৪৭২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০২৫-২৬ সালে ৫ হাজার ৬০২ কোটি…
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) December 18, 2025