প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: এবছর বিহার এবং আগামী বছরে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। মুখ্যমন্ত্রীর সিংহাসনে কে এবার আধিপত্য দখল করবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে সামাজিক এবং রাজনৈতিক শিবিরে তাঁর গুণগত প্রভাবের উপর। তাই কাজে কও ফাঁক না রেখে এখন থেকে ভোট প্রচারের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। এমতাবস্থায় ADR তুলে ধরল এক বিস্ফোরক তথ্য। দেশের বিভিন্ন রাজ্য মিলিয়ে নাকি প্রায় ৪৭ শতাংশ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা (Criminal Charges) রুজু হয়েছে ৷ খুন-ধর্ষণ-অপহরণ এই সমস্ত কাণ্ডে ভারতের ৪৭% মন্ত্রী-ই নাকি অপরাধীর তালিকায় রয়েছে।
সংবিধান সংশোধন বিল বিতর্ক দেশ জুড়ে
কিছুদিন আগে সংবিধান সংশোধন বিলকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে এক উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নিয়ে আসা নতুন বিলে বলা হয়েছিল যে, প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কোনও মন্ত্রী যদি গ্রেফতার হন এবং একটানা ৩০ দিন জেল হেফাজতে থাকেন, তাহলে ৩১তম দিনে তাঁকে হয় পদত্যাগ করতে হবে, নয়ত পদ থেকে সরানো হবে। এছাড়াও এই নতুন বিল অনুযায়ী, কোনও রাজ্যের রাজ্যপাল বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের লেফটেন্যান্ট গভর্নরই নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে পদ থেকে সরানোর সুযোগ পাবেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীকে সরাতে পারবেন রাষ্ট্রপতি। এই বিলকে ঘিরে বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্যে সরকার ফেলে দিতেই এই বিলকে অস্ত্র করতে উদ্যোগী হয়েছে মোদি সরকার। এমতাবস্থায় বিতর্কের মাঝেই এবার প্রকাশ্যে এল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
৪৭% মন্ত্রী-ই নাকি অপরাধীর তালিকায়
নির্বাচনী অধিকার সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস’-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন রাজ্য মিলিয়ে প্রায় ৪৭ শতাংশ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে নাকি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। আর সেই তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমত হতবাক সাধারণ মানুষ। জানা গিয়েছে ২৭টি রাজ্য, ৩টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের ৬৪৩ জন মন্ত্রীর মধ্যে ৩০২ জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে উঠে এসেছে ফৌজদারি অভিযোগ। আর এই ৩০২ জন মন্ত্রীর মধ্যে ১৭৪ জনের বিরুদ্ধে গুরুতর ফৌজদারি মামলা রয়েছে। সেক্ষেত্রে তালিকায় তেলুগু দেশম পার্টির অনুপাত সবচেয়ে বেশি৷ কারণ রিপোর্ট বলছে তাদের ২৩ জন মন্ত্রীর মধ্যে ২২ জনের নামেই নাকি ফৌজদারি মামলা রয়েছে এবং ১৩ জনের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের মামলা রয়েছে।
কোন মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে নেই ফৌজদারি মামলা?
অন্যদিকে ADR এর রিপোর্ট অনুযায়ী, আপ মন্ত্রীদের মধ্যে ১৬ জনের মধ্যে ১১ জন ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি এবং ৫ জন গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও ৩৩৬ জন বিজেপি মন্ত্রীর মধ্যে ১৩৬ জন, প্রায় ৪০ শতাংশের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে ৮৮ জন মানে ২৬ শতাংশের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ নথিভুক্ত করা রয়েছে। বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের ৪০ জন মন্ত্রীর মধ্যে ১৩ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে মামলা। পাশাপাশি অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, বিহার, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, পঞ্জাব, তেলেঙ্গানা, হিমাচল প্রদেশ, দিল্লি এবং পুদুচেরি এই ১১ বিধানসভা কেন্দ্রে ৬০ শতাংশেরও বেশি মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। তবে, হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর, নাগাল্যান্ড এবং উত্তরাখণ্ডের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলা নেই।
আরও পড়ুন: মতুয়াদের অপমানের জের! মহুয়ার বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নালিশ মমতাবালার অনুগামীদের
কোটিপতির তালিকায় রয়েছে কজন?
উল্লেখ্য, ADR রিপোর্টে মন্ত্রীদের আর্থিক সম্পদের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব তুলে ধরা হয়েছে। তাদের মতে, মন্ত্রীদের গড় সম্পদের পরিমাণ ৩৭.২১ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৬৪৩ জন মন্ত্রীর মোট সম্পদের পরিমাণ ২৩৯২৯ কোটি টাকা। ৩০টি বিধানসভার মধ্যে ১১ জন মন্ত্রী কোটিপতি। কর্ণাটকে সর্বোচ্চ আটজন মন্ত্রী, অন্ধ্রপ্রদেশে ছয়জন এবং মহারাষ্ট্রে চারজন মন্ত্রী রয়েছেন কোটিপতির তালিকায়। এছাড়াও অরুণাচল প্রদেশ, দিল্লি, হরিয়ানা এবং তেলেঙ্গানায় যেখানে দু’জন করে কোটিপতি রয়েছে সেখানে গুজরাত, হিমাচলপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং পঞ্জাবে একজন করে মন্ত্রী কোটিপতি রয়েছেন।