গর্জে উঠলেন মমতা, সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি ভাঙার খবর পেয়ে বাংলাদেশকে বার্তা ভারতেরও

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের পর এবার ভাঙা হচ্ছে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে অবস্থিত সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি। তুমুল শোরগোল শুরু হয় গোটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে। জানা গিয়েছে, হরিকিশোর রায় রোডে এই পুরনো বাড়িটি একসময় বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাদেমির ভবন হিসাবে ব্যবহৃত হত। তাই এবার বাড়িটি ভেঙে ফেলা নিয়ে ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করল কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার।

সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি ভাঙছে ইউনূস প্রশাসন

কিছুদিন আগে বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক বাড়িতে তাণ্ডব চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। রীতিমত বাংলা সংস্কৃতির ভাঙচুর করা হয়। যা নিয়ে ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষপর্যন্ত বাধ্য হয়েই এই ঘটনার হস্তক্ষেপ করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন তিনি। এমন হিংসাত্মক কাজের প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশে সরকারের সঙ্গে কথার বলার আবেদন জানিয়েছিলেন। আর এই আবহেই এবার বাংলাদেশে সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি ভাঙতে বসল মহম্মদ ইউনূসের প্রশাসন।

বাড়ি ভাঙা নিয়ে মমতার টুইট

বাংলাদেশে একের পর এক বাংলা সংস্কৃতির অবক্ষয়ের ঘটনায় রীতিমত ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই যখনই উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ভেঙে ফেলার খবর তিনি জানতে পারেন, তখনই এক্স হ্যান্ডলে মমতা লিখেছেন, “খবরে প্রকাশ যে, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা, স্বয়ং স্বনামধন্য সাহিত্যিক-সম্পাদক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর স্মৃতিজড়িত তাঁদের পৈতৃক বাড়িটি নাকি ভেঙে ফেলা হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন যে, “আমি বাংলাদেশ সরকার ও ওই দেশের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে আবেদন করব, এই ঐতিহ্যশালী বাড়িটিকে রক্ষা করার জন্য। ভারত সরকার বিষয়টিতে নজর দিন।”

ইউনূসকে বার্তা কেন্দ্রীয় সরকারের

এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টুইট করার পরই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বাংলাদেশে সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি ভাঙার বিষয়ে বার্তা দেওয়া হয় বাংলাদেশ সরকারকে। সম্প্রতি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম ANI এই বিষয় নিয়ে টুইট করে। সেখানে এই পৈতৃক বাড়ির ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং দুই দেশের সংস্কৃতির যোগকে উল্লেখ করে বলা হয় যে এই বাড়ি ভাঙার সিদ্ধান্ত যেন পুনর্বিবেচনা করা হয়। তার বদলে সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করে সাহিত্যের মিউজিয়াম গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। আর সেই নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারত সরকারের তরফে সহযোগিতার প্রস্তাবও দেওয়া হয়।

শিশুবিষয়ক কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন

এদিকে বাংলাদেশের পুরাতত্ত্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৯ সাল থেকে দেড়শোর বেশি বছর পুরনো এই বাড়িটি বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমি ভবন হিসাবে ব্যবহার করা হত। কিন্তু ২০০৭ সাল থেকে নিরাপত্তার কারণে সেই বাড়িটি থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় শিশু অ্যাকাদেমি। সম্প্রতি সেটি ভেঙে বহুতল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তা জানতে পেরেই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের শশীলজ জাদুঘরের মাঠ কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বাড়িটি ভাঙা সম্পর্কে তথ্য চেয়ে জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।

আরও পড়ুন: পুজোতেও চালিয়ে যেতে হবে কাজ! কলকাতা পুরসভার নিকাশি বিভাগের কর্মীদের ছুটি বাতিল

অন্যদিকে বাংলাদেশের এক জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমে ঢাকার শিশু বিষয়ক আধিকারিক মহম্মদ মেহেদি জামান বলেন যে বিগত ১০ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বাড়িটি যেকোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়ে বিপদ ঘটতে পারে। তিনি জানান, এর জায়গায় সেমি-কংক্রিটের একটি বিল্ডিং তৈরি করা হবে। এবার দেখার পালা মহম্মদ ইউনূস সরকার কতটা তৎপর হয়ে ওঠে ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবেদনের ভিত্তিতে।

Leave a Comment