গাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি সঙ্গে বড় ব্যবসাও! কত সম্পত্তির মালিক হুমায়ুন কবীর?

Property Of Humayun Kabir

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: গত ৬ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন বিধায়ক হুমায়ুন কবির। হুমায়ুন দাবি করেন, তাঁর এই বাবরি মসজিদ তৈরি করতে ৩০০ কোটি টাকা লাগবে। আর এই আবহে কয়েক লক্ষ ইট এসে পৌঁছেছে বেলডাঙার রেজিনগরে। সঙ্গে মসজিদ অনুদান হিসেবে ট্রাঙ্কে ভরে ভরে আর্থিক অনুদানও এসেছে। আর সেক্ষেত্রেই প্রশ্ন উঠছে হুমায়ুনের সম্পত্তি (Property Of Humayun Kabir) নিয়ে।

রাজনীতিবিদ ছাড়াও হুমায়ুন হলেন ব্যবসায়ী

সদ্য সাসপেন্ড হওয়া ভরতপুরের প্রাক্তন বিধায়ক হুমায়ুন কবীর দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজনীতিতে রয়েছেন। তৃণমূল, বিজেপি সহ অনেক দলেই ছিলেন তিনি। রাজনীতিবিদ ছাড়াও তিনি একজন ব্যবসায়ী এবং ব্যক্তিগত ভাবে নিজে একজন কোটিপতি। ঠিকাদারি ব্যবসা রয়েচে তাঁর। রাস্তা-ঘাট তৈরির কন্ট্রাক্ট পান তিনি। এলাকায় তাঁর নামে কিছু জমি রয়েছে বলেও জানেন মানুষজন। একসময় কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রথম এই কংগ্রেসের মাধ্যমেই রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন তিনি, এরপর ২০১৮-তে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু বেশিদিন থাকেনি সেখানে। এরপর তৃণমূলে যোগ দেন ২০২০ তে। কিন্তু কিছুদিন আগেই ধর্মের রাজনীতির কারণে সাসপেন্ড করে দেওয়া হয় শাসকদলের তরফ থেকে। এমতাবস্থায় খবরের শিরোনামে উঠে এল হুমায়ূন কবীরের সম্পত্তি সংক্রান্ত একাধিক তথ্য।

একাধিক জমির মালিক হুমায়ুন

হুমায়ুন কবীরের ২০২১ এর স্থাবর সম্পত্তি প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে রেজিনগরে দুটি ও বহরমপুরে একটি জমি রয়েছে তাঁর। একটি জমির দাম ৮ লক্ষ টাকা, একটি ৪ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা ও আর একটি ১ লক্ষ টাকার জমি রয়েছে। এছাড়াও তাঁর নামে রয়েছে ১.৭ একরের আরও একটি জমি। শুধু তাই নয় কলকাতার রাজারহাটে ও কলিন স্ট্রিটে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে হুমায়ুনের। ওই ফ্ল্যাট দুটির মূল্য ছিল আনুমানিক ৩৫ লক্ষ টাকা হবে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন ২০২১-এ দাখিল করা হলফনামায় হুমায়ুনের অস্থাবর সম্পত্তির (Property Of Humayun Kabir) পরিমাণ সূত্রে জানা গিয়েছে তাঁর একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২৮ হাজার টাকা, অপর কয়েকটি অ্যাকাউন্টে যথাক্রমে ৩ হাজার ৮৭০ টাকা, ৮১২ টাকা ও ৭ হাজার ৫৪৩ টাকা ছিল। এছাড়া পেনশন অ্যাকাউন্টে ছিল ১৭২৬ টাকা।

স্ত্রী এবং ছেলের সম্পত্তি অত্যাধিক

২০২১-এ দাখিল করা হলফনামায় জানা গিয়েছে হুমায়ুন কবীরের হাতে সেই সময় ছিল নগদ ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। তাঁর স্ত্রীর হাতে ছিল ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু স্ত্রী মীরা সুলতানার অ্যাকাউন্টে টাকার অঙ্কটা অনেকটাই বেশি। সূত্রের খবর মীরা সুলতানার দুটি অ্যাকাউন্টে সেইসময় ছিল যথাক্রমে ২ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা ও ৪৪ হাজার টাকা। এছাড়াও হুমায়ুন কবীরের ছেলে গোলাম নবী আজাদ বর্তমানে পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ। তাঁর বার্ষিক আয় গড়ে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে তাঁর আয় ছিল ৩ লক্ষ ৪৯ হাজার ৪০ টাকা।

বার্ষিক আয় পরিবারের

রিপোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে ২০১৫-১৬ সালে হুমায়ুন কবীরের আয়ের পরিমাণ ছিল ২ লক্ষ ৬৯ হাজার ২৪০ টাকা। ২০১৬-১৭-তে সেই আয় বেড়ে হয় ৪ লক্ষ ২ হাজার ৫৭০ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে সেটা আরও কিছুটা বেড়ে হয় ৪ লক্ষ ২১ হাজার ৭০। এরপর ২০১৯-২০২০ অর্থবর্ষে তাঁর আয়ের পরিমাণ ছিল সর্বমোট ৩ লক্ষ ৮৭ হাজার ৬৬০। তাঁর স্ত্রীরও আয় ছিল লক্ষ লক্ষ টাকা। মীরা সুলতানা ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে আয় করেছেন ৪ লক্ষ ৯৯ হাজার ৩৬০ টাকা। ২০১৭-১৮ তে ৪ লক্ষ ৬৮ হাজার ২১৯ টাকা, ২০১৮-১৯ এ ৩ লক্ষ ২১ হাজার ১৮০ টাকা ও ২০১৯-২০ তে ৩ লক্ষ ৮৮ হাজার ৬৫৪ টাকা আয় করেছেন মীরা।

আরও পড়ুন: পুলকার-বাসের জন্য কঠোর ব্যবস্থা! বড় ঘোষণা পরিবহন দফতরের

জীবনবিমাতেও রয়েছে লক্ষাধিক টাকা

হুমায়ুন কবীরের সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে হুমায়ুনের নামে ৪ লক্ষ টাকার একটি টাটা সাফারি গাড়ি রয়েছে এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে একটি জেসিবি, যার মূল্য ৮ লক্ষ টাকা। হুমায়ুনের নামে রয়েছে ৩ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকার সম্পত্তি। ৪ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকার একটি জীবনবিমা ছিল তাঁর নামে। অপর একটি বিমার অঙ্ক ১ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা। ৩ লক্ষ ও ২ লক্ষ টাকার আরও দুটি বিমার কথাও উল্লেখ আছে হলফনামায়। ৫০ হাজার টাকার করে তিনটি এলআইসি ছিল হুমায়ুনের। ৪ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকার একটি লোন নিয়েছিলেন তিনি। আর স্ত্রীর নামে রয়েছে ১৯ লক্ষ ১৫ হাজার টাকার সোনা। সব মিলিয়ে ২০২১-অনুযায়ী হুমায়ুনের নামে থাকা মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২৭ লক্ষ ১০ হাজার ৪৩০ টাকা ও তাঁর স্ত্রীর কাছে থাকা সম্পত্তির অঙ্ক ৩০ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা।

Leave a Comment