সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: ফের ওপার বাংলার হাওয়া গরম! 16 জুলাই গোপালগঞ্জে (Gopalganj Violence) দিনভর চলছিল গুঞ্জন-উত্তেজনা। তবে সন্ধ্যার পর সেই গুঞ্জন রূপ নেয় রক্তাক্ত হামলায়। অভিযোগ ওঠে, সেদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে 5 জন সাধারণ মানুষ, যাদের মধ্যে এক হিন্দু যুবকও রয়েছে। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যাচ্ছে এক যুবকের গলায় সেনা সদস্য বুট চেপে ধরে রেখেছে!
রক্তাক্ত গোপালগঞ্জ
ঘটনার মাত্র কয়েকদিন পরেই মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ-জামান বলে বসেন, শুধু ভালো ইঞ্জিনিয়ার হলেই চলবে না। ভালো মানুষ হতে হবে। মানবিকতা, শান্তি-শৃঙ্খলা সব মেনে চলতে হবে। এগুলি হলেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব। তবে তার এই বক্তব্য যেন বিতর্ক উস্কে দিচ্ছে। কারণ প্রশ্ন উঠছে, সেনারা যখন নিজেই মানবিকতার নিয়ম ভাঙছে, তাহলে এই উপদেশ শোনানো ঠিক কতটা যুক্তিযুক্ত?
কী হয়েছিল সেদিন গোপালগঞ্জে?
ওপার বাংলার সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, সেদিন এনসিপি গোপালগঞ্জে এক কর্মসূচি নিয়েছিল। এনসিপি’র তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর সরানো উচিত। আর তা শুনেই পথে নেমে আসে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতারা। সেখানেই শুরু হয় হামলা। তবে এই অবস্থায় সেনাবাহিনী এবং পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে নামে। আর সেই আবহে সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করেই সেনাবাহিনীর নির্বিশেষে গুলি চালায়।
আরও পড়ুনঃ CRPF জওয়ানকে ব্যাপক মারধর! কানওয়ার ভক্তদের তাণ্ডব মির্জাপুরে, ভাইরাল ভিডিও
এই ঘটনার পর পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছে সংখ্যাটা আরো বেশি। এমনকি একজন হিন্দু যুবকও প্রাণ হারিয়েছে। তবে তার পরিবার এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ জানাতে সাহস পায়নি। কেউ কেউ বলছে, অভিযোগ করলেই বিপদ বাড়বে। এদিকে সেনাবাহিনীর তরফ থেকে কোনও গুলি চালানোর কথা সরাসরি শিকার না করা হলেও, আইএসপিআর জানিয়েছে, উশৃঙ্খল জনতা সন্ত্রাসবিরোধী আন্দোলন করেছিল। তাই সেনারা বাধ্য হয়ে এরকম ব্যবস্থা নেয়।
ইতিমধ্যে গোপালগঞ্জে ১৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, মা’রা গিয়েছেন ৫ জন।
ক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা রাস্তায় নেমে এসেছে।গোপালগঞ্জের আশপাশ জেলার মানুষজন আপনারাও রাস্তায় নেমে আসুন। pic.twitter.com/69W7rxSWcQ
— 𝐒𝐡𝐚𝐡𝐚𝐥𝐚𝐦 𝐒𝐚𝐣𝐞𝐞𝐛 (@shahalamsajeeeb) July 16, 2025
ভাইরাল যন্ত্রণার ছবি
ভাইরাল একটি ছবি সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, এক যুবকের গলায় এক সেনা বুট তুলে বসে রয়েছে। আর এই দৃশ্য দেখে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। অনেকে বলছে যে, শুধুমাত্র উন্নয়ন দিয়েই দেশ চলবে না। মানুষের গলায় যখন সেনাবাহিনীর পা উঠছে, তখন গণতন্ত্র আর নিঃশ্বাস নিতে পারবে না। যদিও সেনাপ্রধান এখনো গোপালগঞ্জের এই ঘটনার বিষয়ে মুখ খোলেনি। এখন দেখার পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।
তবে গোপালগঞ্জে সেনার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে সরাসরি কিছু বলেননি বাংলাদেশের সেনা প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। সম্প্রতি তিনি মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির এক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। এই অশান্তির আবহে তাঁকে গোপালগঞ্জ নিয়ে কিছু বলতে শোনা না গেলেও তিনি ইঙ্গিতে বলেন, ‘শুধু ভালো ইঞ্জিনিয়ার নয়, ভালো মানুষও হতে হবে। শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। মানবিক হতে হবে। এর ফলেই দেশের উন্নতি উপকার হবে।’