সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা ব্লকের সাঁইতল এলাকায় পোস্ট অফিসের কেলেঙ্কারি (Post Office Scam) নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল, গ্রাহকদের জমা রাখা লক্ষ লক্ষ টাকার সঞ্চয় আত্মসাৎ করে চম্পট দিয়েছে ওই পোস্ট অফিসের এক পিওন। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছিল, সেই টাকার অংক প্রায় 50 লক্ষের বেশি ছাড়িয়েছে।
কে ওই অভিযুক্ত?
বর্তমানের রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গিয়েছিল, অভিযুক্তের নাম অমল দলুই অরফে শিবু। এলাকায় তিনি ছিলেন বেশ পরিচিত মুখ হিসাবেই। সহজ সরল ব্যবহার ও মিষ্টি কথাতেই গ্রাহকদের ভোলাতেন তিনি। তাই গ্রামবাসীরা ব্যাংকের পরিবর্তে পোস্ট অফিসে তাদের সঞ্চয়ের টাকা রাখতেন। এমনকি সেই টাকা জমা দেওয়ার দায়িত্ব দিতেন অমলের হাতেই। তবে সেই বিশ্বাসের পিছনে যে এরকম প্রতারণা লুকিয়ে ছিল, তা কেও ভাবতেও পারেননি। হ্যাঁ, গ্রাহকরা টেরও পাননি যে, তাদের কষ্টার্জিত সঞ্চয় ধীরে ধীরে ধুলিস্যাত হয়ে যাচ্ছে।
কীভাবে ফাঁস হল কেলেঙ্কারির পর্দা?
এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দা সমর মাইতিকে কেন্দ্র করে। 2000 সাল থেকেই পোস্ট অফিসে তিনি টাকা জমা করতেন। তবে সম্প্রতি মূল মাহমুদপুর পোস্ট অফিসে পাসবই আপডেট করতে গিয়েই ধরা পড়ে চরম জালিয়াতি। হ্যাঁ, তিনি দেখেন তার জমা দেওয়া 93 হাজার টাকার বদলে মাত্র 14 হাজার টাকা ব্যালেন্স দেখাচ্ছে। এরপর অন্যান্য গ্রাহক পাসবই আপডেট করা শুরু করে। আর একে একে উঠে আসে চরম প্রতারণার অভিযোগ। এরপর ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা পোস্ট অফিস ঘেরাও করে এবং ডেবরার সাঁইতল এলাকা একেবারে উত্তল হয়ে ওঠে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল, গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিলেও সে অনেক সময় রশিদ দিত না। অনেকের পাসবই নিজের কাছেই রেখে দিত, পাশাপাশি জমা দেওয়ার তথ্য কারচুপি করে বিশাল অংকের অর্থ নিজের অ্যাকাউন্টে ঢুকিয়ে নিয়েছিল ওই অভিযুক্ত। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়েছিল অমল দলুই।
অবশেষে গ্রেপ্তার হল অভিযুক্ত
এই চরম উত্তেজনায় গ্রাহকরা অবিলম্বে অভিযুক্তের গ্রেপ্তারের দাবি করেছিলেন। অবশেষে মঙ্গলবার রাতে ডেবরারই এক এলাকা থেকে অমলকে গ্রেফতার করেছে স্থানীয় পুলিশ। এরপর বুধবার মেদিনীপুর জেলা আদালতে তোলা হয় তাকে। আর বিচারক তিন দিনের পুলিশি হেফাজত নির্দেশ দেন। ডেবরা থানার এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছেযোগ সংগ্রহ করা হচ্ছে আর আত্মসাৎ করা টাকার সঠিক অংক নির্ধারণের কাজে চলছে।
আরও পড়ুনঃ গাজা দখল করবে ইজরায়েল, নেতানিয়াহুর যোজনায় অনুমোদন দিল নিরাপত্তা পরিষদ!
উল্লেখ্য, সাঁইতল পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার পারমিতা পাল ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের শান্ত করারও চেষ্টা করেছিলেন এবং পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে, গ্রাহকদের ক্ষতির বিষয়টি উচ্চকর্তৃপক্ষের কাছেই জানানো হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।