‘চাকরির বদলে কার কাছ থেকে টাকা নিয়েছি?’ খোলা চিঠির মাধ্যমে বেহালাবাসীকে প্রশ্ন পার্থর

Partha Chatterjee

প্রীতি পোদ্দার, বেহালা: অবশেষে দীর্ঘ সাধনার পর জেলমুক্তি হল রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee)। তিন বছর তিন মাস ১৯ দিন রাজনীতির ময়দান থেকে এক্কেবারে দূরেই ছিলেন তিনি। এদিকে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে ধরেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। আর তাতেই বেহালা বিধায়কের সম্মানে বেশ আঘাত লেগেছে। অনেকেই তাই জানতে চায় আসল সত্যিটা কী? সত্যিই কি নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে পার্থ জড়িত ছিল? এবার সেই নিয়ে বেহালা (পশ্চিম) বিধানসভা কেন্দ্রের জনগণের উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

দুর্নীতির কলঙ্কে জর্জরিত পার্থ

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ২৩ জুলাই এসএসসি দুর্নীতি মামলায় নাম জড়িয়ে থাকার কারণে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সির হাতে গ্রেফতার হতে হয়েছিল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে। নানা বিস্ফোরক অভিযোগ, সাক্ষীদের মন্তব্যকে তুলে ধরেছিল ইডি এবং সিবিআই, আর তাই নিয়ে এই দুর্নীতি মামলা কম জলঘোলা হয়নি, তবে এইমুহুর্তে সেইসবকে পিছনে ফেলে আজ প্রায় সাড়ে তিন বছর জেল থেকে বেরিয়ে এলেন পার্থ। কিন্তু জেল ফেরৎ এলেও তাঁর নামে যে কলঙ্ক চারিদিকে রটেছে সেই নিয়ে এবার বড় সিদ্ধান্ত নিলেন পার্থ। তাই নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দাদের চিঠি লিখে পার্থ জানতে চাইলেন, চাকরির বিনিময়ে কার থেকে টাকা নিয়েছেন তিনি৷ এমনকি তাঁর নাম করে কেউ চাকরির বিনিময়ে টাকা চেয়ে থাকলেও সেই নাম জানানোর জন্য আর্জি জানালেন বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক৷

বেহালাবাসীকে খোলা চিঠি পার্থর

রিপোর্ট অনুযায়ী আজ অর্থাৎ বুধবার সকালে পার্থ চট্টোপাধ্যায় খোলা চিঠি লিখলেন বেহালা বাসীর উদ্দেশ্যে। আর সেই খোলা চিঠিই এদিন লিফলেট আকারে বেহালা পশ্চিম বিধানসভা এলাকায় বিলি শুরু করেছে তাঁর অনুগামীরা। লিফলেট আকারে লেখা সেই খোলা চিঠিতে তিনি বলেন, “বেহালা পশ্চিমের মানুষ বরাবর আমাকে ভরসা করেছেন। ওদের মনে এখন হাজারও প্রশ্ন। সে প্রশ্নের উত্তর আমাকে দিতে হবে। প্রয়োজনে অটো নিয়ে বেহালাবাসীদের বাড়িতে পৌঁছব। প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেব। আমি সৎ পথে ছিলাম সেটা সকলের জানা উচিত। অর্থাৎ তিনি যে সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরতে মরিয়া, তা স্পষ্ট। এদিনের খোলা চিঠিতে বিধায়ক হিসেবে তিনি নিজের কেন্দ্রের জন্য কী কী কাজ করেছেন, তার খতিয়ানও তুলে ধরেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷

ED এবং CBI কে তুলোধোনা পার্থর

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই খোলা চিঠির দ্বিতীয় ভাগে অভিযোগ করেছিলেন যে, মিথ্যে অপবাদ দিয়েই তাঁকে ED এবং CBI গ্রেফতার করেছিল। সেই কারণে ২০২২ সালের ২২ জুলাই আমি কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে কারারুদ্ধ হই৷ রাষ্ট্রীয় সংস্থায় উচ্চপদে চাকরির সুনাম যা সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে অর্জন করেছি এবং আমার পারিবারিক সংস্কৃতি যা আমাকে সংস্কৃতবান মানুষ এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছে, আজ মিথ্যে অপবাদে তা ভূলণ্ঠিত৷ তাই আজ আমি সোজাসাপ্টা জিজ্ঞেস করছি, চাকরির বিনিময়ে আমি কার কাছ থেকে অর্থ নিয়েছি? আসুন, যথাসাধ্য প্রমাণ নিয়ে যে কে চাকরির জন্য অর্থ দিয়েছেন আমার হাতে? কারা আমার নাম করে টাকা নিয়েছেন, এমন কেউ যদি থাকে তাদের নাম আমাকে জানান৷ আমি উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবই৷”

আরও পড়ুন: রান্না করতে গিয়েই বিপত্তি! হঠাৎই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ মুর্শিদাবাদে, মৃত ১

নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দাদের উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখে পার্থ চট্টোপাধ্যায় আবেদন জানিয়েছেন, বেহালায় ডায়মন্ড হারবার রোডে তাঁর জনসংযোগ দফতর জনবাক্সে প্রমাণসহ যেন টাকা নেওয়ার অভিযোগ থাকলে তা জমা দেন বেহালা পশ্চিমের বাসিন্দারা৷ এছাড়াও পার্থ আরও আর্জি করেছেন যে, “আপনারা আমার উপরে আস্থা রেখে পাঁচ পাঁচবার বিধানসভায় জিতিয়েছেন৷ আপনাদের কাছে আমি দায়বদ্ধ৷ গণদেবতা এর উত্তর খুঁজুন, আমার ছবি মসীলিপ্ত হওয়া থেকে উদ্ধার করুন৷’

Leave a Comment