সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: চিন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দিক থেকে নয়, বরং কাঁচামালের দিক থেকেও নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে চলেছে। হ্যাঁ, রেয়ার আর্থ বা দুর্লভ খনিজের (Rare Earths) কেন্দ্রবিন্দু বলতে গেলে জিনপিং-এর দেশকেই বোঝে সবাই। আর সে কারণেই ভারত সহ বহু দেশ এই খনিজের জন্য চিনের উপরেই নির্ভরশীল। তবে সেই নির্ভরশীলতা কাটাতে এবার বিরাট পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত।
Times of India-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা গিয়েছে, ভারতের পরিকল্পনা এবার একেবারেই আলাদা। সমুদ্রের তলদেশ থেকে এবারে দুর্লভ খনিজ তুলে আনতে চলেছে দিল্লি। আর এই লক্ষ্যে সরকার 10,000 বর্গ কিলোমিটার জুড়ে এক্সপ্লোরেশনের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাইছে। এর জন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘের এক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সিবেড অথরিটির কাছে আবেদন করার প্রস্তুতিও নিয়েছে ভারত সরকার।
সমুদ্রের নীচেই লুকিয়ে রয়েছে বিশাল খনিজ ভান্ডার
একটা সময় দুর্লভ বস্তু মানেই মাটির নীচের খনিজকে ভাবা হত। তবে সেই ধারণা এখন অনেকটাই বদলেছে। কারণ এবার সমুদ্রের গভীরে নজর গিয়েছে ভারতের। সম্প্রতি ভারত মহাসাগরে একাধিক সমীক্ষা চালানোর পর জানা গিয়েছে, সমুদ্রের তলদেশে প্রচুর পরিমাণে কপার, ম্যাঙ্গানিজ, নিকেল এবং কোবাল্ট মজুত রয়েছে।
এমনকি মরিশাস উপকূলের কাছে সোনা, প্লাটিনাম, কপার এবং কোবাল্টের খনিও রয়েছে। আর এই খনিজগুলি আধুনিক প্রযুক্তি শিল্পের মূল ভিত হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ এখান থেকে পাওয়া চিপ থেকেই তৈরি হতে পারে ইলেকট্রিক গাড়ি, স্মার্টফোন কিংবা ডিফেন্স সিস্টেমের যন্ত্রপাতি।
ভারতের লক্ষ্য কী?
সম্প্রতি, ভারত মহাসাগরে 10,000 বর্গ কিলোমিটার এলাকায় অনুসন্ধানের পরিকল্পনা করেছে ভারত। পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল সিবেড অথরিটির কাছে বর্তমানে কেন্দ্র সরকার আবেদন করতে চলেছে। আর বঙ্গোপসাগরের 7.5 লক্ষ বর্গকিলোমিটার ইতিমধ্যেই বরাদ্দ পেয়েছে ভারত। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব উপায়ে খনিজ উত্তোলনের জন্য টেকনোলজিও তৈরি করা হচ্ছে।
তবে হ্যাঁ, এত বড় লক্ষ্য পূরণ করার মতো উন্নত প্রযুক্তি এখনো পর্যন্ত ভারত তৈরি করতে পারেনি। পরিবেশের ক্ষতি না করেই এই খনিজ উত্তোলন করতে চাইছে ভারত। আর এই প্রযুক্তি তৈরি করতে অনেকটাই সময় লাগবে বলে মনে করছে বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ। তবে ইতিমধ্যেই ভারত, চিন, ফ্রান্স এবং দক্ষিণ কোরিয়া এই প্রযুক্তি তৈরি করতে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে।
আরও পড়ুনঃ ৯ সেপ্টেম্বর উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ফলাফল ওই দিনই! ধনখড়ের জায়গায় কে?
চিনের দাদাগিরি ঠেকাতে ভারতের পাল্টা চাল
প্রসঙ্গত, বিশ্বের প্রায় 90 শতাংশ রেয়ার আর্থ চিনের দখলে। ফলে ভারত সেই চিন থেকেই আমদানি করে ম্যাগনেট, কোবাল্ট ও অন্যান্য রেয়ার খনিজ। অথচ ভারতের মাটিতেই 69 লক্ষ টনের বেশি রেয়ার আর্থের রিজার্ভ রয়েছে, যা নাকি বিশ্বের মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম।
তবে মূল সমস্যা একটাই। এই খনিজ উত্তোলন করা এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সেই প্রযুক্তি এখনো দেশে তৈরি হয়নি। তার ওপর রয়েছে চুম্বক উৎপাদনের ঘাটতি। আর এইসব মিলিয়ে যদি ভারতের প্রকল্প সফল হয়, তাহলে একদিকে যেমন চিনের উপর আমদানির নির্ভরশীলতা কমবে, তেমন অন্যদিকে বিশ্ব বাজারে নিজেদের দাপট দেখানোর সুযোগ পাবে ভারত।