প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: বারাসত (Barasat) মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে মৃত যুবকের ‘চোখ উধাও’ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় রীতিমত সাড়া পরে গিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে। যত দ্রুত সম্ভব ঘটনার রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে। কিন্তু এবার মৃত যুবকের দেহের দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তে উঠে এল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। চোখ চুরি নয়, বরং হাসপাতালের মর্গে রাখা মৃতদেহের চোখ খুবলে নিয়েছিল ইঁদুরই! মাথায় হাত পড়ল সকলের।
চোখ চুরির অভিযোগ উঠল বারাসাত হাসপাতালে
উল্লেখ্য, গত সোমবার সকালে বারাসতের কাছে বামনগাছি এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় একটি ম্যাটাডোরের সঙ্গে ধাক্কা লাগে স্থানীয় বাসিন্দা প্রীতম ঘোষ নামে বছর বত্রিশের এক যুবকের। দুর্ঘটনার সময় আশেপাশের স্থানীয়রা তড়িঘড়ি যুবককে নিয়ে আসে বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এর পরই দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। পরের দিন সন্ধ্যায় যখন যুবকের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় তখন দেখা যায় যুবকের একটি চোখ ‘খুবলে’ তুলে নেওয়া হয়েছে। ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরিবারের লোকজন। শুরু হয় বিক্ষোভ। আর ঠিক ওইসময় মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় আসতে দেখে এগিয়ে যায় মৃত যুবকের পরিবার। তাঁদের কাছ থেকে অভিযোগ শোনার পর যথাযথ তদন্তের আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী।
ময়না তদন্তের রিপোর্টে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
রিপোর্ট মোতাবেক বুধবার রাতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশমতো ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বারাসত মেডিক্যাল কলেজের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল যুবকের দেহের ময়নাতদন্ত করে। দলে ছিলেন এক জন চক্ষু বিশেষজ্ঞ, এক জন শল্য চিকিৎসক এবং এক জন সহকারী মেডিক্যাল সুপার (এএমএস)। গোটা প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফিও করা হয়। স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ তদন্তকারী দল জানিয়েছে, অস্ত্রোপচার করে চোখ তুলে নেওয়া হয়েছে, এমনটা নয়। বরং মৃতদেহ থেকে চোখ উপড়ে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে ইঁদুরজাতীয় কোনও প্রাণী। রাতেই স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, ইঁদুর বা ছুঁচোর দ্বারা চোখে ওই ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, মৃতের শরীরে চোখের বেশ কিছুটা অংশ রয়ে গিয়েছে। বাকি অংশে রক্ত জমে গিয়ে কালো হয়ে যাওয়ায় বাইরে থেকে দেখে মনে হচ্ছে যেন পুরো চোখটাই নেই।
আরও পড়ুন: ১,৮০৬ জনের নাম! ব্রাত্যের বৈঠকের পরই দাগিদের সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করল কমিশন
স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ তদন্তকারী দলের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মর্গের ভিতর কোন ফাঁকা জায়গা থেকে ওই ইঁদুর বা ছুঁচো ঢুকল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এমনকি বাতানুকূল যন্ত্রের ফাঁকা জায়গা দিয়ে ইঁদুর মর্গে ঢুকেছিল কি না, তাও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তবে এখনও কোনো আপডেট পাওয়া যায়নি। এদিকে মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালে চোখ চুরি হওয়ার প্রসঙ্গ উঠতেই মমতা আশ্বাস দেন যে পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে। আর সেইমত গতকাল মৃতের বাড়িতে চাকরির নিয়োগপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।