প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: একের পর এক গ্রামে বেড়েই চলেছে রোগের প্রকোপ! বাধ্য হয়ে তাই এবার ৪০ কোটি টাকারও বেশি ব্যায়ে জলপাইগুড়িতে নির্মিত পোল্ট্রি ফার্ম বন্ধের পথে হাঁটল প্রশাসন। প্রতিদিন গড়ে যেখানে এক লক্ষেরও বেশি ডিম উৎপাদিত হত, সেখানে আজ তা গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে বন্ধের মুখে পড়তে চলেছে। ফলে শ্রমিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী মহল সকলেরই কপালে চিন্তার ভাঁজ।
ঘটনাটি কী?
গত কয়েক মাস ধরে গ্রামবাসীদের তরফে অভিযোগ উঠে এসেছে যে, ফার্ম থেকে মাছির উপদ্রব ক্রমেই ছড়িয়ে পড়েছে আটটি গ্রামে। এতে নোংরামি ও অসুবিধা বাড়ার পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে এলাকায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু জন্ডিস নয়, লেপ্টোস্পাইরোসিস রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। আসলে এই রোডের প্রাদুর্ভাব মূলত ফার্মের অব্যবস্থাপনার কারণেই হচ্ছে। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে গ্রামবাসীর মধ্যে। আর সেই কারণেই এবার ফার্ম বন্ধ করার নির্দেশ পাঠাল জেলা প্রশাসন।
বড় সিদ্ধান্ত প্রশাসনের
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার, অর্থাৎ ১৪ আগস্ট, স্বাস্থ্য, প্রাণীসম্পদ সহ বিভিন্ন দফতর নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক ডাকেন জেলাশাসক শামা পারভিন। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পোল্ট্রি ফার্ম কর্তৃপক্ষ। সেখানে প্রশ্ন করা হয় যে ফার্ম চালাতে যে সব গুরুত্বপূর্ণ নথি প্রয়োজন তা এইমুহুর্তে নেই কেন? তাই ওই কাগজপত্র আগামী ৭ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করে প্রশাসনের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। এবং ততদিন পর্যন্ত ফার্ম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই জলের নমুনা সংগ্রহ করে বেলগাছিয়া ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়েছে প্রাণী সম্পদ দফতর। তবে এখনও আসেনি রিপোর্ট।
কর্মসংস্থান নিয়ে চিন্তিত কর্মীরা
এদিকে প্রশাসনের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে বেশ খুশি গ্রামবাসীরা। তাঁদের বক্তব্য, কর্মসংস্থানের পাশাপাশি স্বাস্থ্য জীবন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে তাই ডিম উৎপাদন গুরুত্বপূর্ণ হলেও মানুষের স্বাস্থ্য আগে। তাই ফার্ম বন্ধের সিদ্ধান্ত সঠিক। অন্যদিকে ওই ফার্মে কর্মরতরা প্রশাসনের সিদ্ধান্তে বেশ চিন্তিত। তাঁদের মতে এই ফার্মে অনেকেই এখানে কাজ করছে। হঠাৎ করে কাজ চলে গেলে পরিবারকে নিয়ে পথে বসতে হবে। তবে এই প্রসঙ্গে ফার্ম ম্যানেজার রঞ্জিৎ সরকার জানিয়েছে, “আমাদের কাগজপত্রের খামতি যত দ্রুত সম্ভব পূরণ করা হবে। তবে ফার্ম বন্ধ হয়ে গেলে প্রচুর মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।”
আরও পড়ুন: ‘দায়ী মুখ্যমন্ত্রী, আমি কী করে থাকব!’ ২ বছরের বাচ্চা নিয়ে আর্তনাদ শিক্ষক সুবল সোরেনের স্ত্রীর
প্রসঙ্গত, রাজ্যে ডিমের ঘাটতি মেটাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে হাত মিলিয়েছিল অন্ধ্রপ্রদেশের সাই শিবম পোল্ট্রি ফার্ম কর্তৃপক্ষ। যার ফলে জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের সন্ন্যাসীকাটা গ্রামপঞ্চায়েতের চেকরমারি গ্রামে প্রায় ১৫ একর জমির উপর ৪০ কোটি টাকা খরচে তৈরি হয়েছিল লেয়ার মুরগির বিশাল পোল্ট্রি ফার্ম। কর্মসংস্থানের এক বিরাট রাস্তা খুলে গিয়েছিল। কিন্তু রোগের প্রকোপ বাড়তেই করা সিদ্ধান্তের পথে হাঁটলো প্রশাসন। নর্থ বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুরজিৎ পাল জানান, ”এই ফার্ম বন্ধ হলে রাজ্যের অর্থনৈতিক ভান্ডারে বিপুল ক্ষতি হবে।”