প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে এবার ট্রাফিক পুলিশকে কড়া বার্তা দিল কলকাতা হাইকোর্ট! এখন থেকে কোনও গাড়ির চালককে জোর করে জরিমানা দিতে বাধ্য করা যাবে না। এমনকি সন্দেহের ভিত্তিতে ড্রাইভিং লাইসেন্সও বাজেয়াপ্ত করতে পারবে না পুলিশ। এ ব্যাপারে আদালতের তরফে সব ট্রাফিক পুলিশকে আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকার ও পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের।
ঘটনাটি কী?
রিপোর্ট অনুযায়ী, দুই বছর আগে অর্থাৎ ২০২৩ সালের ২৬ মার্চ হাইকোর্টের আইনজীবী শুভ্রাংশু পান্ডা তাঁর গ্রামের বাড়ি থেকে কলকাতায় আসার পথে ট্রাফিক পুলিশ পলাশ হালদারের কাছে আটক হন। খিদিরপুর রোড ও এজেসি বসু রোডের সংযোগস্থলে তিনি আটক হন। অভিযোগ, আইনজীবির গাড়ির গতি ঘণ্টায় ৭৭ কিমি ছিল, তাই তাঁকে ১,০০০ টাকা নগদ জরিমানা দিতে বলা হয়। সেই সময় আইনজীবী অনলাইনে জরিমানা দিতে চাইলে সার্জেন্ট তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্স কেড়ে নেন এবং অস্থায়ী অনুমোদনপত্রও দিতে চাননি।
লাইসেন্স সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ রায় হাইকোর্টের
এছাড়াও ওই ঘটনার ভিত্তিতে আইনজীবী শুভ্রাংশু পান্ডার অভিযোগ, অভিযুক্ত ট্রাফিক সার্জেন্ট নাকি আইনবিরুদ্ধ ভাবে আচরণ করেছেন। এবার সেই অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা করা হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই মামলাটি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের বেঞ্চে ওঠে। সমস্তটা পর্যবেক্ষণ করে বিচারপতি ট্রাফিক পুলিশকে লাইসেন্স সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ রায় প্রদান করেন। এবং তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ট্রাফিক পুলিশ কারও ড্রাইভিং লাইসেন্স সাসপেন্ড বা বাতিল করতে পারবে না। একমাত্র লাইসেন্স বাতিল করার অধিকার রয়েছে লাইসেন্স কর্তৃপক্ষের।
অস্থায়ী অনুমোদনপত্র দেওয়ার নির্দেশ
এদিন সেই মামলায় বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় ওই ট্রাফিক সার্জেন্টকে জানিয়েছেন যেহেতু তিনি আইনজীবীর লাইসেন্স ফেরত দিয়েছেন, তাই আদালত তাঁকে কড়া শাস্তি দিচ্ছে না। কিন্তু ঠিকভাবে আইন না পালন করায় আপাতত তাঁকে সতর্ক করা হচ্ছে। বলা হয়েছে ভবিষ্যতে ওই পুলিশ অফিসারকে আইন মেনে কাজ করার পাশাপাশি গাড়িচালকদের সঙ্গে ভদ্র ভাবে এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে আচরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ১৯৮৮ মোটর ভেহিকল আইন অনুযায়ী, শুধুমাত্র নিশ্চিতভাবে আইনভঙ্গ প্রমাণিত হলে পুলিশ অফিসার লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করতে পারেন। এবং সেই সময় চালককে অস্থায়ী অনুমোদনপত্রও দিতে হবে।
আরও পড়ুন: বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখাশোনার জন্য ৩০ দিনের ছুটি পাবেন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা
ট্রাফিক আইন নিয়ে প্রশিক্ষণের নির্দেশ
আদালত আরও জানিয়েছে একতরফা ভাবে কোনো গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা যাবে না। নেওয়া যাবে না জোর করে জরিমানা। প্রত্যেক চালককে বক্তব্য জানানোর সুযোগ দিতে হবে। হাই কোর্ট জানায়, এই মামলায় রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর এবং রাজ্য পুলিশের ডিজিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁরা যেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেন। এছাড়াও রাজ্যকে আদালত জানিয়েছে, সব ট্রাফিক অফিসারদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে তাঁরা যেন আইন সঠিক ভাবে জানেন এবং তা মেনে চলেন।