ঝাড়গ্রামের বড় সঙ্কট! বাতাসে কমছে অক্সিজেন, বাড়ছে কার্বন ডাই অক্সাইড! দাবি সমীক্ষায়

jhargram

সহেলি মিত্র, কলকাতাঃ আপনিও কি আগামী দিনে ঝাড়গ্রামে (Jhargram) ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করছেন? তাহলে আপনার জন্য রইল অত্যন্ত জরুরি খবর। এবার ঝাড়গ্রাম জেলায় এমন কিছু ঘটছে যেটি সম্পর্কে জানলে আপনিও আকাশ থেকে পড়বেন। বর্তমান পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, ঝাড়গ্রাম শহরের বায়ুতে হু হু করে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে। শহরের জুবিলি মার্কেট থেকে শুরু করে পাঁচমাথা মোড়, আদালত ও কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড চত্বরে বাতাসে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ সহনশীলতার মাত্রা থেকে ১০০পিপিএমের বেশি বেড়েছে। আর এই ঘটনা উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মধ্যে। বলতে গেলে শহরের বাতাসে থাকা বিশুদ্ধ অক্সিজেনের মাত্রা একপ্রকার তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

ঝাড়গ্রামের বাতাসে বাড়ছে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ

সাম্প্রতিককালে একটি ফিল্ড সার্ভে করা হয়েছিল। আর সেই সার্ভেতে শোরগোল ফেলে দেওয়ার মতো তথ্য সামনে উঠে এসেছে। এমনিতে ঝাড়গ্রামের নাম নিলেই পাহাড়, নদী, ছোট ছোট ছোট লেক, সবমিলিয়ে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য পরিচিত। শরীর ভালো রাখতে, সর্বোপরি যারা ঘুরতে পছন্দ করেন তাঁদের কাছে এই ঝাড়গ্রাম কোনও প্যারাডাইসের থেকে কম নয়। বুক ভরা নিঃশ্বাস পাওয়ার জন্য মানুষ এখানে ছুটে আসেন। তবে এবার নাকি সমীক্ষায় উঠে এসেছে এখানে অক্সিজেনের মাত্রা হু হু করে কমছে।

এহেন ঘটনার জন্য একের এক এক গাছ কেটে ফেলার বিষয়টিকেই দায়ী করছেন পরিবেশপ্রেমীরা। বলা হচ্ছে, গত শতাব্দীর পাঁচের দশকে ঝাড়গ্রাম শহর গাছপালায় ভরা ছিল। বাসিন্দার সংখ্যা ছিল টেনেটুনে সাতহাজার। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের বহু মানুষ স্বাস্থ্য উদ্ধারে এসে ঝাড়গ্রামে স্থায়ীভাবে থেকে গিয়েছেন। ২০০০ সাল থেকে শহরের জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। বাড়িঘর, দোকানপাট, আবাসন তৈরির ফলে বন, কৃষিজমি ও জলাভূমির পরিমাণ কমতে থাকে।

আর বাসযোগ্য নয় ঝাড়গ্রাম?

এমনিতে সুস্থ পরিবেশের জন্য বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা ১৯.৫০ থেকে ১৯.৮০ শতাংশ থাকা উচিত। কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৩৮০ থেকে ৪২০ পিপিএমের মধ্যে থাকা দরকার। কিন্তু এবছর ক্ষেত্র সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ঝাড়গ্রাম শহরের পাঁচমাথা মোড় এলাকায় বাতাসে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫২০-৫৮০ পিপিএম। অন্যদিকে জুবিলি মার্কেটে তা ৫৬০-৬২০পিপিএমে পৌঁছেছে। জনবহুল ও বদ্ধ এলাকায় বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় ২ শতাংশ কম দেখা যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে হঠাৎ করে কেন এই আমূল পরিবর্তন ঘটেছে? ২০২০ সালে ঝাড়গ্রাম শহরের ৬.২৬ বর্গকিমি এলাকা বনভূমি ছিল। এখন তা কমে ৪.৯৬ বর্গকিমি হয়েছে। ২১শতাংশ বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। শহরে বাড়িঘর, দোকানপাট, আবাসন প্রভৃতি মিলে ৮.৩৮ বর্গকিমি ছিল। এখন তা বেড়ে ১২.৩১ বর্গকিমি হয়েছে। বসতবাড়ির সংখ্যা এক লাফে ৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত পাঁচবছরে ২০ শতাংশ জলাভূমি হ্রাস পেয়েছে। ২.৮৫ বর্গকিমি কৃষিজমি ছিল। এখন তা ১.৮০ বর্গকিমিতে নেমে এসেছে। শহর এলাকায় ৩৭ শতাংশ কৃষিজমি হ্রাস পেয়েছে।

জামবনীর সেবা ভারতী মহাবিদ্যালয়ের ভূগোলের বিভাগীয় প্রধান প্রণব সাহু ওই ক্ষেত্র সমীক্ষার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘করোনার সময় ঝাড়গ্রাম শহরের পরিবেশ নিয়ে ক্ষেত্র সমীক্ষা করা হয়। সেসময় শহরে পরিবেশ দূষণ কমে যাওয়ায় তথ্য উঠে এসেছিল। কিন্তু সম্প্রতি এক ক্ষেত্র সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শহরে ঘন জনবসতি, বাজার, বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিশুদ্ধ অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গিয়েছে। কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ অনেকটা বেড়েছে। এই পরিবেশে স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা আছে।’

Leave a Comment