প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: এখনও জ্বলছে বাংলাদেশ (Bangladesh)! হিংসা এবং প্রতিশোধের আগুনে জায়গায় জায়গায় শুরু হচ্ছে বিক্ষোভ। ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর সামনে আসার পরেই হিংসার আগ্রাসন থেকে বাদ পড়েনি সংবাদমাধ্যমও। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ডেলি স্টার’ এবং ‘প্রথম আলো’-র অফিসে হামলা চালানো হয়। কিন্তু দমে যাননি তাঁরা। এই ঘটনার প্রতিবাদে ফের মাথা উঁচু করে দাঁড়াল প্রথম আলো ও ডেলি স্টার।
প্রকাশিত হল প্রথম আলো ও ডেলি স্টার প্রতিবেদন
রিপোর্ট মোতাবেক, গত বৃহস্পতিবার রাতে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-র মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর সামনে আসার পরেই বাংলাদেশের প্রথম সারির দুই জনপ্রিয় সংবাদপত্র প্রথম আলো এবং ডেলি স্টার অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। শুধু তাই নয়, ওই ভাঙচুর করা সংবাদমাধ্যমগুলির অফিসে লাগানো হয় আগুন, এদিকে সেই সময় অফিসে আটকে পড়েছিলেন অনেক সংবাদকর্মী। পরে আগুনের লেলিহান শিখা থেকে সেনা, পুলিশ এবং বিজিবি-র সদস্যরা ক্রেনের মাধ্যমে তাঁদের উদ্ধার করে। যারফলে গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার প্রকাশিত হয়নি প্রথম আলো ও ডেলি স্টার পত্রিকা। কিন্তু দমে থাকেননি তাঁরা। এক দিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে আজ, শনিবার প্রকাশিত হল বাংলাদেশের প্রথম সারির দুই সংবাদপত্র প্রথম আলো এবং ডেলি স্টার।
তুলে ধরা হল হাদির শেষকৃত্য সংক্রান্ত প্রতিবেদন
শুক্রবার অফিসে হামলাজনিত কারণে প্রথম আলো এবং ডেলি স্টার, এই দুই পত্রিকার কোনও সংস্করণ প্রকাশ করা যায়নি। অফলাইন ও অনলাইন মাধ্যমেও কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল। সবমিলিয়ে প্রশ্নের মুখে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা। এরপর আজ প্রথম আলো-র যে মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশ করেছে, তার প্রথম পাতার প্রথম খবরের শিরোনাম রাখা হয়েছে— ‘প্রথম আলো-ডেলি স্টার আক্রান্ত’। সেখানেই বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনাপ্রবাহ এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়ার কথা, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির শেষকৃত্য সংক্রান্ত প্রতিবেদন রাখা হয়েছিল প্রথম পাতায়। পাশাপাশি দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিবৃতিও তুলে ধরা হয়েছিল।
বাদ যায়নি ডেলি স্টার
প্রথম আলোর পাশাপাশি অপর সংবাদমাধ্যম ডেলি স্টার হামলা প্রসঙ্গ তাঁদের প্রকাশিত পাতায় তুলে ধরেছে। ডেলি স্টার আসলে বাংলাদেশের প্রথম সারির ইংরেজি সংবাদপত্র। শনিবার প্রথম পাতার শিরোনামে ভেসে ওঠে একটিই শব্দ ‘আনবাওড’ অর্থাৎ বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় আপসহীন। সেক্ষেত্রে হামলা বা হুমকির সামনে মাথা নত না করার বার্তাও দিয়েছে এই পত্রিকা। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ডেলি স্টার-এর সাংবাদিক বৃহস্পতিবার রাতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতাও ভাগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১টা নাগাদ কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। একজন ফোন করে জানান, এই ঘটনার পরে কয়েকজন ডেলি স্টার-এর অফিসের দিকে এগোচ্ছেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে অশান্তির আবহে বিশেষ সতর্ক কলকাতা পুলিশের, বড়দিনের আগে নজরদারি
প্রসঙ্গত, আক্রান্ত বাংলাদেশে দুই জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো এবং ডেলি স্টার পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে শুক্রবারই ফোনে কথা বলেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস। তাদের উপর হামলার নিন্দা করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে বার্তা দিয়েছেন তিনি। এদিকে তেজগাঁও থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতের হামলার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার বা আটক করা যায়নি। তবে তদন্ত শুরু হয়েছে। অন্যদিকে শুক্রবার সকালে দুই সংবাদপত্রের ক্ষতিগ্রস্ত দফতর পরিদর্শন করেছেন ঢাকা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা।