টাকা দেওয়ার নামে নেওয়া হচ্ছিল আধার, ব্যাঙ্ক ডিটেইলস! SIR আবহে কলকাতায় চাঞ্চল্য

Kolkata Illegal Work money distribution some suspicious person Arrested

বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: বাংলা জুড়ে চলছে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন। আর সেই SIR আবহের মাঝেই খোদ কলকাতার বুকে টাকা বিলি করতে গিয়ে ধরা পড়লেন এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী বলে পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা (Kolkata Illegal Work)। জানা যাচ্ছে, কলকাতা পৌরসভার 108 নম্বর ওয়ার্ডের কালিকাপুর বস্তিতে টাকা বিলি করতে এসেছিলেন বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। সেখানে দিল্লির এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নাম করে বাসিন্দাদের কাছ থেকে তাঁদের আধার কার্ড, প্যান নম্বর এমনকি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজনের বিরুদ্ধে। যদিও ইতিমধ্যেই অভিযুক্তদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ।

কোন উদ্দেশ্যে টাকা বিলি?

স্থানীয় সূত্রে খবর, কলকাতা পৌরসভার 108 নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত কালিকাপুর বস্তিতে পৌঁছে সেখানকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দাদের ঘরে ঘরে গিয়ে তাঁদের নথিপত্র চাইতে থাকেন চার-পাঁচ জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি। কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘আমরা দিল্লির এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা থেকে এসেছি। আমাদের সংস্থা থেকে বিভিন্ন বস্তিবাসীদের আর্থিক সাহায্য করা হচ্ছে।’ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিডস নামক একটি সংস্থার নাম করে প্রত্যেক ঘর পিছু আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা বলেন ওই ব্যক্তিরা।

পরবর্তীতে, অভিযুক্তদের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার রেজিস্টার্ড নম্বর জানতে চাওয়া হলে তারা সেটা দেখাতে পারেননি। সূত্রের খবর, প্রথমদিকে টাকার লোভ দেখিয়ে একটি সাদা কাগজে স্থানীয় বাসিন্দাদের আধার, প্যান থেকে শুরু করে যাবতীয় প্রয়োজনীয় নথির তথ্য লিখে নিচ্ছিলেন অভিযুক্তরা। পরে বাসিন্দাদের বেশ কয়েকজনের মধ্যে সন্দেহ বাড়লে খবর দেওয়া হয় 108 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষকে। সেখান থেকেই ফোন যায় আনন্দপুর থানায়। এরপরই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই 4-5 জন অভিযুক্তকে আটক করে পুলিশ। বর্তমানে তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে কলকাতা পৌরসভার 108 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ জানান, ‘আমি জানতে পারি ওই ব্যক্তিরা বস্তি এলাকায় ঘুরে ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে তাদের ডকুমেন্ট নিয়ে ফর্ম ফিলাপ করাচ্ছে। কীসের ফর্ম জানতে লোক পাঠালে তারা জানান, একটি এনজিওর তরফে আর্থিক দিক থেকে দুর্বল বস্তিবাসীদের আড়াইহাজার টাকা করে দেওয়া হবে। সেজন্যই তাদের ব্যাঙ্ক ডিটেইলস এবং অন্যান্য নথি প্রয়োজন। জানতে পারি তারা এখানকার নন, দিল্লির এনজিও থেকে এসেছেন। পরে চেপে ধরলে অভিযুক্তরা বলেন, তাঁরা সিডস নামক এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী। তবে ওই সংস্থার কোনও রেজিস্ট্রেশন নম্বর তাঁরা দেখাতে পারেননি।’

স্থানীয় কাউন্সিলর আরও বলেন, ‘অভিযুক্তদের দেখে সন্দেহ হলে আনন্দপুর থানায় অভিযোগ জানাই। তারপরই ওদের প্রিজন ভ্যানে করে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। এই মুহূর্তে তদন্ত চলছে। পুলিশ খুঁজে বের করুক ঠিক কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কলকাতার বস্তিতে টাকা বিলি করছিল অভিযুক্তরা!’ এদিকে, বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার দাবি, কয়েকটা বালতি এবং ব্লিচিং পাউডার দেখিয়ে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ওই অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। পরে তাদের কাছ থেকে জোর করে আধার এবং ব্যাঙ্কের নম্বর লিখিয়ে নিয়েছে! বলা হয়েছিল আগে ফোনে ওটিপি যাবে তারপর টাকা পাবেন। গোটা ঘটনায় বেশ চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।

অবশ্যই পড়ুন: নজরে বুলেট ট্রেন, ২৪০০ কোটি খরচে আহমেদাবাদে তৈরি হচ্ছে ১৬ তলার স্টেশন

উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন আগেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘ভোটের আগে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নাম করে রাজ্যে টাকা বিলি করা হতে পারে!’ SIR আবহে সেই প্রসঙ্গই তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বারবার জোরালো হয়েছে। বেশ কয়েকবার অভিযোগের আঙুল উঠেছে বিজেপির দিকেও! এবার কি তাহলে সেই মতোই কলকাতার বিভিন্ন বস্তিতে টাকা বিলি হচ্ছে? নাকি এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে কোনও বড়সড় ষড়যন্ত্র? খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

Leave a Comment