প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: রাজ্যে কয়লা, গরু পাচারের পর নির্বাচনের আগে এবার ED-র নজরে এল বালি খাদান ও বালি পাচার ঘটনা। বেআইনি আর্থিক লেনদেনের এই তদন্তে গতকাল অর্থাৎ সোমবার, সকাল থেকে একযোগে রাজ্যের ২২টি জায়গায় তল্লাশি অভিযানে নেমেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এমতাবস্থায় বালিপাচার কাণ্ডের (Sand Smuggling Case) তদন্তের তালিকায় উঠে এল মেদিনীপুরের বিখ্যাত বালি ব্যবসায়ী সৌরভ রায়ের নাম। যাঁকে ঘিরে এই মুহূর্তে ED-র মাথায় একাধিক প্রশ্নের জট পাকছে।
উদ্ধার ৬৪ লক্ষ টাকা!
দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ উঠছিল, অবৈধ বালি খনির কারণে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। আর সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই প্রথমবার বালিপাচার কাণ্ডের তদন্তে নামল ED। সোমবার সকাল আটটা নাগাদ মেদিনীপুরে বালি ব্যবসায়ী সৌরভ রায়ের বাড়িতে গিয়েছিল ইডি-এর বিশেষ টিম। জানা গিয়েছে, ১৪ ঘণ্টা তল্লাশির পর বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, মোবাইল ও বেশ কিছু নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। বাড়ির ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় নাকি রাখা ছিল নোটের বান্ডিল, সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৬৪ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। আর এই অবস্থায় তদন্তের মাধ্যমেই উঠে এল সৌরভ রায়ের এই ধনসম্পত্তি বৃদ্ধির এক বিস্ফোরক তথ্য।
ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেছিল সৌরভ
এইসময়ের রিপোর্ট অনুযায়ী এবং স্থানীয় প্রতিবেশীদের তরফে জানানো হয়েছে যে, খুব ছোট বয়সে সৌরভ রায় তাঁর বাবাকে খুব ছোট বয়সে হারিয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর পরিবারে অভাব নেমে আসে। এরপর তাঁর মা বিজলিপ্রভা রায়-ই একা হাতে মানুষ করেছেন সৌরভকে। সেই সময় অভাব অনটনের মধ্যে সংসারে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর উপায় অল্প বয়সেই খুঁজে নিয়েছিলেন সৌরভ রায়। প্রথমে ঠিকাদারি ব্যবসা দিয়ে শুরু হয় তাঁর কাজ। ধীরে ধীরে যখন বালির ব্যবসা শুরু করতে থাকেন, তখন থেকেই তাঁর আর্থিক উন্নতি চোখে পড়তে থাকে। গত ২-৩ বছর ধরে তিনি বৈধ খাদান লিজে নিয়ে বালি ব্যবসা শুরু করেছেন বলে খবর। আর সেখান থেকে তিনি এখন রাজ্যের অন্যতম বড় বালি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত।
সমাজসেবা ও দান ধ্যানেও নাম রয়েছে সৌরভের
বালির ব্যবসায় সৌরভের এই রকেট গতিতে উত্থান দেখে স্থানীয় বাসিন্দারাও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। এই মুহূর্তে রাজ্যের অন্যতম বড় বালি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত তিনি। মেদিনীপুর, লালগড়-সহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেছে সে। জানা গিয়েছে শাসকদলের সঙ্গেও তাঁর বেশ ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তবে শুধু বিপুল সম্পত্তির মালিক হিসেবে নয়, সমাজসেবা ও দান ধ্যানেও নাম রয়েছে সৌরভ রায়ের। কিন্তু এই বৈধ ব্যবসার পিছনে এত ধনসম্পত্তি হল কীভাবে তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ED র মনে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে ব্যবসায়ীর সমস্ত নথিপত্র। বাড়ির পরিবারকেও নানা জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ক্লাসরুমে বসতি স্থাপন ঠিকাকর্মীদের! আসানসোলের স্কুলে করুণ দৃশ্য
উল্লেখ্য, মেদিনীপুরে বালি ব্যবসায়ী সৌরভ রায়ের আসল বাড়ি হলেও, ঝাড়গ্রাম থেকে চলত তাঁর বালি খাদানের ব্যবসা। কারণ ঝাড়গ্রামের লালগড়ে তাঁর বিশাল বাংলো ছিল। স্থানীয়দের দাবি সেখানেই জাল সিও ব্যবহার করেই বালি পাচারের সম্রাট হয়ে উঠেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয় নিত্যদিন সৌরভের ওভারলোডিং গাড়ি রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করায়, রাস্তার অবস্থা বেহাল হয়ে যাচ্ছিল। বারবার অভিযোগ জানানো হলেও কোনও সুরাহা পাওয়া যায়নি। সবটাই খতিয়ে দেখছে ইডি-র তদন্তকারী দল। তল্লাশি ঘিরে যথেষ্ট চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।