বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: ময়দান সহজ নয়। ডার্বি যেমন সাফল্য দেয়, আবার সেই ডার্বিই খলনায়ক বানায়। সম্প্রতি এমন সুরেই কথা বলতে শোনা গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের প্রধান কোচ অস্কার ব্রুজোকে। তবে 1 বছরের মধ্যে এই স্প্যানিশ কোচ ডার্বি কী জিনিস তা যেমন বুঝেছেন, তেমনই ডার্বিতেই যে বহু ফুটবলার অন্তরালে চলে গিয়েছেন সেকথাও বোধ হয় জানতে বাকি নেই তাঁর।
কেননা, তাঁর লাল হলুদেরই এক প্রাক্তনীর জীবনে ঘোর দুঃসময় ডেকে এনেছিল এই ডার্বি। আজ থেকে 18 বছর আগে মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গলের রঙিন ডার্বিতে মাত্র 15 মিনিটের জন্য মাঠে নেমেই সাদাকালো দুনিয়াতে হারিয়ে গিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলের হয়ে স্বপ্ন দেখা অমূল্য মন্ডল। আজ তাঁর খোঁজ নেয় না কেউ! কোথায় আছেন তিনি? ইস্টবেঙ্গল ইস্টবেঙ্গল বলে চেঁচানো সমর্থকরা সে খবর রাখেন?
ইস্টবেঙ্গলের অমূল্য সম্পদ হতে পারতেন অমূল্য মন্ডল
সালটা 2007। আজ থেকে ঠিক 18 বছর আগের এক ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলকে 4-3 ব্যবধানে হারিয়েছিল প্রতিবেশী মোহনবাগান। আর সেই পরাজয়টাই অমূল্যর জীবনটা ছারখার করে রেখে দিয়েছিল! সেবার ম্যাচ শুরুর প্রথমার্ধেই ইস্টবেঙ্গলের উপর একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মোহনবাগান। শুরু থেকে আক্রমণ শানিয়ে প্রথমার্ধেই ম্যাচ পকেটে পুরে নিয়েছিল সবুজ মেরুন।
তবে বিরতির পর ইস্টবেঙ্গলের কাছে ছিল অঢেল সময়। তবে তা একেবারেই কাজে লাগাতে পারেনি মশাল দল। আর সেই ম্যাচেই নিজেকে প্রমাণ করার জন্য মাত্র 15 মিনিট সময় পেয়েছিলেন অমূল্য মন্ডল। আর ওই সময়টাই পরাজয়ের পর তাঁর ফুটবল কেরিয়ারকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়।
সে বছর ডার্বিতে মোহনবাগানের কাছে শুধুমাত্র পরাজয় স্বীকার করেই থামতে হয়নি তাঁকে। সেই সাথে হজম করতে হয়েছে একাধিক কটুক্তি, সমালোচনা এবং বিদ্রুপ। চতুর্দিক থেকে ধেয়ে আসা ঝড়ে একেবারে কাহিল হয়ে পড়েছিলেন অমূল্য। ধীরে ধীরে মানসিকভাবে পুরো ভেঙে পড়েছিলেন তিনি! হারিয়ে ফেলেছিলেন অনুশীলনের আগ্রহ।
এরপরই কোনও মতে ইস্টবেঙ্গল অধ্যায় শেষ করে চলে গিয়েছিলেন এয়ার ইন্ডিয়ায়। দীর্ঘ 18 টা বছর পার করে এসে এবার সেই সব কথা তুলেই ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে কিছুটা ক্ষোভ, কিছুটা অভিমান উগরে দিলেন অমূল্য মন্ডল।
সম্প্রতি ইস্টবেঙ্গল প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পূর্বের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে অমূল্য বলেন, আমি স্টপারের খেলোয়াড় ছিলাম। তবে ইস্টবেঙ্গল আমাকে কোনও দিনই স্টপারে খেলায়নি। কখনও সাইড ব্যাক, কখনও আবার হাফ পজিশনে খেলতাম আমি। কিন্তু আমি আমার নিজস্ব পজিশানাই ভাল খেলতাম। তবে সুযোগটাই পাইনি। ওদিকে ডার্বিতে মাধব দাসকে স্টপার হিসেবে নামানো হয়েছিল। উনি বড়সড় চেহারার জন্য এই জায়গা পেয়েছিলেন বলেই দাবি করেন অমূল্য।
অবশ্যই পড়ুন: Youtuber এলভিস যাদবের বাড়িতে ভয়াবহ হামলা, চলল ২০ রাউন্ড গুলি! পলাতক দুষ্কৃতী
এখন কী করেন, কোথায় থাকেন অমূল্য মন্ডল?
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বর্তমানে বারুইপুরের ধপধপি নিবাসী প্রাক্তন ফুটবলার অমূল্য মন্ডল এক ওষুধ কোম্পানির কর্মী। মাঝেমধ্যে বাড়ির পাশের মাঠে কচি-কাচাদের ফুটবলের অ আ ক খ শেখান তিনি। এরপর নিয়ম করে অফিসে যান। ছুটির দিনগুলোতে খেলাধুলা নিয়ে চর্চা করে সময় কেটে যায় অমূল্যর। তবে আজ থেকে 18 বছর আগের সেই ডার্বি অমূল্যর জীবনে যে আদতেই অভিশাপ, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
হয়তো সে কারণেই আর টিভিতে ফুটবল ম্যাচ দেখেন না তিনি। আজ ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগানের ডুরান্ড কাপের কলকাতা ডার্বি, সে কথাও জানতে বাকি নেই তাঁর। তবে ম্যাচ দেখবেন না তিনি। আসলে নিজের ফুটবল কেরিয়ারটা জলে যাওয়ায় আর নতুন করে লাল হলুদ, সবুজ মেরুনের সাফল্য বা ব্যর্থতা নিয়ে ভাবেন না একসময়ের দাপুটে ফুটবলার অমূল্য।