সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: বাজারে এখন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এক কথায় আগুন। তবে রান্নাঘরের এলপিজি-তেও যেন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। কারণ, গ্যাসের দাম (LPG Price Hike) দিনের পর দিন বাড়ছে। গত এপ্রিল মাসে সিলিন্ডার প্রতি ৫০ টাকা বৃদ্ধির পর যেন সাধারণ মানুষের ক্ষোভ কিছুতেই থামছে না। সরকার যুক্তি দিয়েছিল যে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম ৬৩% বেড়েছে। তাই বাধ্য হয়েই গ্যাসের দাম বাড়াতে হয়েছে। তবে এখন তো আন্তর্জাতিক কাঁচামালের দাম আড়াই বছরের মধ্যে সবথেকে কম। অথচ সিলিন্ডারের দাম এক টাকাও কমেনি! তাহলে নেপথ্যে কোন কারণ?
কাঁচামালের দাম কমলেও ঊর্ধ্বগতি গ্যাসের দাম
আসলে রান্নার গ্যাস তৈরির মূল উপাদান হল প্রোপেন আর বিউটেন। প্রতিমাসে সৌদি অ্যারামকো এই দুটি উপাদানের আন্তর্জাতিক দর ঘোষণা করে থাকে। সেই দামের উপর নির্ভর করেই মূলত ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন সংস্থাগুলি এলপিজির দাম নির্ধারণ করে। আর সরকার বরাবরই দাবি করে আসছে যে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে সিলিন্ডারের দাম বাড়ে। তবে সেই দাবি মান্যতা পাচ্ছ কোথায়? ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, আন্তর্জাতিক মূল্য কমলেও দেশের বাজারে দামের কোনও হেরফের হচ্ছে না। গ্যাস বিক্রি করে মুনাফা বাড়ছে, আর মুনাফা সেই মুনাফার বড় অংশই ঢুকছে কেন্দ্রের কোষাগারে।
এদিকে গত লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদিপ সিং পুরি কলকাতায় এসে বলেছিলেন যে, বিজেপি ভোট দেখে জ্বালানির দাম নির্ধারণ করে না। তবে বাস্তব বলছে, ভোটের আগে সিলিন্ডার প্রতি দাম কমেছিল ১০০ টাকা। ভোট মিটতেই আবার ৫০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আর এতেই সাধারণ মানুষের মধ্যে উঠতে শুরু করেছেন নানারকম প্রশ্ন। তাহলে কি জ্বালানির দাম রাজনৈতিক সমীকরণের উপর নির্ভর করেই ওঠানামা করছে?
আরও পড়ুনঃ এলোপাথাড়ি গুলি, পড়ল বোমাও! পাকিস্তানি সেনার সদর দপ্তরে জঙ্গি হামলা, মৃত একাধিক
কাঁচামালের দাম তলানিতে ঠেকলেও কেন সুরহা নেই গ্যাসে?
বলাবাহুল্য, ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত কাঁচামালের দাম ৬৩% বেড়েছিল। আর এই যুক্তি দিয়েই এলপিজির দাম চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল সাধারণ মানুষের কাঁধে। তবে এখন তো কাঁচামালের দাম গত ৩০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবুও মানুষকে সেই ৮৭৯ টাকা দিয়েই এলপিজি গ্যাস কিনতে হচ্ছে। এমনকি কয়েক মাস আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, ভারতের বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ হল এলপিজির দামের ঊর্ধ্বগতি। তাই এখন দেখার আগামী দিন এলপিজির দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।