তিন গুলিতে শেষ হয় নাক-চোয়াল, ২৮ বার অস্ত্রোপচারের পর Mask Man! চেনেন এই জওয়ানকে?

Rishi Rajalakshmi

সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: এক সময় ব্রিটিশদের সাথে যেমন বীর সেনারা লড়াই করে আমাদের দেশকে বাঁচিয়েছিল, ঠিক তেমনই স্বাধীনতার পরও দেশের নিরাপত্তার জন্য পাহারা দিচ্ছে সীমান্তরক্ষীরা। হ্যাঁ, পরিবার-পরিজন ছেড়ে, চাদিফাটা রোদ কিংবা হার কাঁপানো শীত, সবকিছুতেই জীবন বাঁচিয়ে রেখে তাঁরা লড়াই করে যাচ্ছেন।

আজকের প্রতিবেদনে আমরা এমনই এক সৈনিকের গল্প বলব, যিনি ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলায় মুখমণ্ডল বিকৃত হয়ে যাওয়ার পরেও হার মানেননি। হ্যাঁ, 28 বার অস্ত্রোপচার সহ্য করেও আবারও বন্দুক হতে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি হলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ঋষি রাজলক্ষ্মী (Rishi Rajalakshmi)।

শুরুটা পুলওয়ামা হামলা থেকেই

দিনটা ছিল 2017 সালের 4 মার্চ। দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় সেনাবাহিনীররা খবর পেয়েছিল যে, এক গ্রামবাসীর বাড়িতে জঙ্গিরা লুকিয়ে রয়েছে। খবর পাওয়া মাত্রই ঋষি রাজলক্ষ্মী তাঁর দল নিয়ে সেখানে অভিযান চালায়। তবে হঠাৎ করেই শুরু হয় গুলির লড়াই। আর মুহূর্তের মধ্যেই তাঁর জীবন ওলটপালট হয়ে যায়।

প্রথমে একটি গুলি তাঁর হেলমেটে বিদ্ধ হয়। তারপর দ্বিতীয় গুলি নাক ছিঁড়ে দেয়, আর তৃতীয় গুলি ছিঁড়ে দেয় চোয়াল। রক্তে ভিজে যাচ্ছিলেন তিনি। তবুও হার মানেননি। হ্যাঁ, অচেতন না হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থেকেও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পাল্টে আক্রমণ চালিয়েছিলেন। এমনকি 30 কিলোমিটার দূরে সেনা হাসপাতালে পৌঁছনোর আগে চোখও বন্ধ করেননি তিনি।

হয়েছে 28 বার অস্ত্রোপচার

প্রথমবার হাসপাতালে তাঁকে দেখে ডাক্তাররাও হতভম্ব হয়ে যায়। বিকৃত মুখ, ভাঙাচোরা চোয়াল দেখে চিকিৎসা করাও প্রায় অসম্ভব মনে হচ্ছিল। তবে তাঁর ইশারায় ডাক্তারবাবুরা বুঝেছিলেন যে, সে লড়াই করতে প্রস্তুত। অপরেশন টেবিলে শুয়েই তিনি আত্মীয়দের আশ্বস্ত করেছিলেন যে, আমি ফিরব।

এরপর মোট 28 বার অস্ত্রপচার করা হয় তাঁর মুখে। প্রাণ বাঁচলেও আগের মতো চেহারা ফেরানো আর সম্ভব হয়নি। তাই পরে মুখে মাক্স ব্যবহার করতে শুরু করেন তিনি। তবে সবথেকে বড় ব্যাপার, তিনি বিশ্রামে না থেকে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়েও সেনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ফের বন্দুক তুলে দাঁড়িয়েছেন সীমান্তে।

আরও পড়ুনঃ দুর্গাপুর থেকে ফেরার পথে ডোমজুড়ে ট্রাকের ধাক্কা! ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার

উল্লেখ্য, ঋষি রাজলক্ষ্মী কেরালার আলাপ্পুঝারের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, যিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা ছেড়ে সেনাবাহিনীর জীবনকেই বেছে নিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি পাঙ্গোড মিলিটারি ক্যাম্পের প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক। তবে তাঁর সাহসিকতা গোটা দেশবাসীর কাছে অনুপ্রেরণা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

Leave a Comment