তিন বছর আটকে BSNL-র বিল, ৩৬ প্রকল্প! রাজ্যের অ্যাকাউন্ট সিজ করার হুঁশিয়ারি হাইকোর্টের

Calcutta High Court

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: সামনেই বিধানসভা নির্বাচন তার আগে ফের হাইকোর্টের (Calcutta High Court) তোপের মুখে পড়ল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। অভিযোগ এই মুহুর্তে কলকাতা হাই কোর্ট এবং বিভিন্ন নিম্ন আদালতের উন্নয়নমূলক কাজ আটকে রয়েছে। অর্থের অভাবে কোনও কাজ এগোনো যাচ্ছে না। আর সেই সংক্রান্ত মামলায় এবার রাজ্যকে হুঁশিয়ারি দিল আদালত। বলল, রিজার্ভ ব্যাঙ্কে রাজ্যের অ্যাকাউন্ট নম্বরই সিজ করার নির্দেশ দেওয়া হবে। আর তাতেই বেশ ঘাবড়ে গেল রাজ্য প্রশাসন।

৩ বছর ধরে বাকি BSNL এর বিলের টাকা

আনন্দবাজারের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিগত কয়েকদিন ধরেই আদালতের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য রাজ্য কেন অর্থ বরাদ্দ করছে না তাই নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছিল। এদিকে রাজ্য ঠিকভাবে অর্থ বরাদ্দ না করায় আদালতের ৩৬টি প্রকল্পের কাজ আটকে গিয়েছে। এমনকি গত তিন বছর ধরে বিএসএনএল বিল দেওয়া হয়নি। পাঁচ কোটি টাকার বেশি অর্থ আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। এবার সেই নিয়ে মামলা উঠল কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে।

রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন বিচারপতির

আজ অর্থাৎ সোমবার হাইকোর্টে মামলার শুনানি চলাকালীন আদালতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের অর্থ দফতরের আধিকারিক। তাদের উদ্দেশ্যেই বিচারপতি দেবাংশু বসাক ক্ষুব্ধ স্বরে বলেন, ‘‘গত তিন বছর ধরে বিল বকেয়া। রাজ্যে কি আর্থিক জরুরি অবস্থা চলছে? বিল না দেওয়ার কারণে BSNL যদি পরিষেবা বন্ধ করে দেয়, তখন কী হবে? তিন বছর যথেষ্ট সময়। বিল দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। রাজ্যের কর্মীদের সঠিক ভাবে বেতন দিচ্ছেন না। হাই কোর্টের কাজে অর্থ বরাদ্দ কি প্রশাসনিক কাজের মধ্যে পড়ে না?’

রাজ্যের অ্যাকাউন্ট সিজ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি

বরাদ্দ মিটিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে অর্থ দফতরের আধিকারিক আদালতে জানান, রাজ্য দু’দিনের মধ্যে অর্ধেক টাকা মিটিয়ে দেবে। তখনই বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘‘কেন দু’দিন সময় লাগবে? এখন তো সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাঠানো যায়।’’ জবাবে আধিকারিক জানান, রাজ্য সরকারের ছুটি রয়েছে। জবাবে বিচারপতি বলেন, ‘‘ছুটি? আজ ছুটি? ইন্টারনেটের কি ছুটি? এই আদালত কি ছুটিতে? আজ যদি সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়, কী হবে?’’ এর পরেই সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যের কাছে জানতে চান, রাজ্যের অ্যাকাউন্ট কোন ব্যাঙ্কে রয়েছে। রাজ্যের আইনজীবী উত্তরে, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের কথা বললে বিচারপতিরা বলেন, ‘‘আমরা রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে বলছি কোনও টাকা না ছাড়তে। আদালতের অনুমতি ছাড়া যেন টাকা ছাড়া না হয়। বিএসএনএল সার্ভিস বন্ধ করে দিলে কিছু বলার থাকবে না। হাই কোর্টের অবস্থা যদি এমন হয়, নিম্ন আদালতে কী হচ্ছে!’’

আরও পড়ুন: বেলডাঙায় তৈরি হবে বাবরি মসজিদ, সৌদি আরব থেকে আসবেন ইমাম! জানালেন হুমায়ুন কবীর

মামলার পরবর্তী শুনানি কবে?

ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়ার কথা উঠতেই রাজ্যের অর্থ দফতরের আধিকারিক জানান, অ্যাকাউন্ট নম্বর তাঁর জানা নেই। এর পরেই বিচারপতিরা বলেন, ‘‘আমরা বসে থাকব। জেনে এখনই বলুন। মুখ্যসচিবকে বলুন অ্যাকাউন্ট নম্বর দিতে।” এরপরই মামলার শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করেন রাজ্যের আইনজীবী এবং বলেন আপাতত ৬০ লক্ষ টাকা মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে বাকি টাকা দেওয়া হবে। এবং রাজ্য এই জানায় যে বিলের ২.৯ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল সেই টাকা আদৌ আদালতের হাতে এসেছে কি না, তা জানতে চান বিচারপতিরা। জানা গিয়েছে মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ১০ নভেম্বর। সেই সময় রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং অর্থসচিবকে সশরীরে আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

Leave a Comment