প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: থমকে গেল প্রতিবাদের ঝড়! শেষ হল তিন দিনের জীবন-মরণ লড়াই। প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে মৃত্যু হল ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়ে যাওয়া ওড়িশার ২২ বছর বয়সী নির্যাতিতার। সোমবার রাতে ভুবনেশ্বর AIIMS-এ মৃত্যু হয় তাঁর।
AIIMS এর তরফে মৃত্যু সংবাদ
গতকাল অর্থাৎ সোমবার, ১৪ জুলাই, রাত ১১টা ৪৬ মিনিটে ভুবনেশ্বর AIIMS কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে যে, চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টার পরেও ওড়িশার বালেশ্বরের ওই অগ্নিদগ্ধ কলেজছাত্রীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। গত শনিবার থেকে ওই ছাত্রী ভুবনেশ্বর এমসের বার্ন ICU-তে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর বৃক্কতন্ত্রও প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও করা হয়। কিন্তু সম্ভাব্য সবরকম পদক্ষেপ করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
ঘটনাটি কী?
‘India Today’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী ১২ জুলাই, শনিবার, কলেজের অধ্যক্ষের কাছে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ জানাতে গেলে শোনা যায় কিছুক্ষণ পরেই সেই তরুণী তড়িঘড়ি বেরিয়ে এসে কলেজ ক্যাম্পাসে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। সেইসময় তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে দগ্ধ হন আরও এক ছাত্র। সঙ্গে সঙ্গে দু’জনকেই জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ছাত্রীর দেহের ৯৫ শতাংশই পুড়ে যাওয়ায় সেদিনই তড়িঘড়ি ভুবনেশ্বর AIIMS-এ স্থানান্তর করা হয়।
চিকিৎসায় পরামর্শ দিচ্ছিল দিল্লি AIIMS
ভুবনেশ্বর AIIMS -এ ভর্তি হওয়ার পর থেকে শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি ওড়িশার সেই নির্যাতিতা পড়ুয়ার। চিকিৎসক মহলের তরফে জানানো হয়েছিল যে, ছাত্রীর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ, তন্ত্র পুড়ে গিয়েছে। কিডনিও পুড়ে যাওয়ার কারণে তরুণীর ডায়ালিসিস চলছিল। শুধু তাই নয় ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে চিকিৎসায় পরামর্শ দিচ্ছিলেন দিল্লি AIIMS-এর বিশেষজ্ঞেরাও। কিন্তু দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর সোমবার রাতেই মৃত্যু হয় ওই নির্যাতিতার।
তদন্তে নামল ওড়িশা পুলিশ
এদিকে তরুণীর আত্মহত্যার চেষ্টার পরে গোটা ওড়িশা জুড়ে কলকাতার আরজি কর ঘটনার ছায়া দেখা গিয়েছে। রাজ্য জুড়ে দানা বাঁধতে শুরু করেছে ক্ষোভ-অসন্তোষ। গোটা ঘটনার তদন্তের স্বার্থে ইতিমধ্যে আসরে নেমেছে ওড়িশা পুলিশের অপরাধদমন শাখা। এদিকে দুই সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ওড়িশার উচ্চশিক্ষা দফতরও পৃথক ভাবে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: এক পঞ্চায়েতেই ৪ হাজারের উপরে ভুয়ো ডেথ, বার্থ সার্টিফিকেট! হাইকোর্টে রিপোর্ট রাজ্যের
কী বলছেন নির্যাতিতার বাবা?
অন্যদিকে গত শনিবার অর্থাৎ ১২ জুলাই ওড়িশার ওই ছাত্রীকে যৌন হেনস্থার কারণে অভিযুক্ত অধ্যাপককে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই সঙ্গে ওই অভিযুক্তকে আড়াল করার চেষ্টা করায় গতকাল, সোমবার ১৪ জুলাই গ্রেফতার করা হয় কলেজের অধ্যক্ষকেও।
তরুণীর বাবাও সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন যে, অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য অধ্যক্ষ চাপ দিচ্ছিলেন তরুণীকে। এমনকি শনিবার অধ্যক্ষের ঘর থেকে বেরিয়েই যে তাঁর মেয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন, সে কথাও বার বার উল্লেখ করছেন তরুণীর বাবা।