দক্ষিণবঙ্গের ৪ জেলায় বন্যার আশঙ্কা! নবান্নর মিটিংয়ে আধিকারিকদের দায়িত্ব বোঝালেন মমতা

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ফের জল ছাড়ল দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন বা DVC। মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে এখনও পর্যন্ত পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধার থেকে প্রায় ৪৮ হাজার কিউসেক জল ছাড়া চলছে। যার ফলে দামোদর নদ তীরবর্তী এলাকায় দেখা দিয়েছে বন্যার আশঙ্কা। তাই এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় নবান্ন তৎপরতা শুরু করেছে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জেলাভিত্তিক দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর।

নবান্নে বৈঠক মমতার

ইতিমধ্যেই দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন DVC-র ছাড়া জল এবং টানা বৃষ্টির জেরে দক্ষিণবঙ্গের চার জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যার ফলে নদীর জল ফুলে ফেঁপে উঠেছে, এমনকি চাষের জমি ও গ্রামেও ঢুকে গিয়েছে জল। আর সেই কারণে এবার বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে প্রশাসন। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে নবান্ন সচিব পর্যায়ের আধিকারিকদের বিভিন্ন জেলার দায়িত্বে পাঠাতে চলেছে।

‘আনন্দবাজার’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, নবান্নে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে রাজ্যে একাধিক জেলায় বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে নানা আলোচনা করা হয়।

চার জেলায় বিশেষ নির্দেশ

নবান্নের তরফে জানানো হয়েছে যে, দুর্যোগ মোকাবিলায় সচিব পর্যায়ের আধিকারিকদের মূল কাজ হবে প্রত্যেকের জেলার বন্যা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা। এবং প্রতিটি পরিস্থিতির ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দ্রুত পদক্ষেপ করা এবং নবান্নে রিপোর্ট পাঠানো।

আর এই নির্দেশ বিশেষ করে পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম ও হুগলি এই চার জেলায় বিশেষভাবে জারি করা হয়েছে। এছাড়াও সেখানে বন্যা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখানে পাঠানো হয়েছে অতিরিক্ত দল। ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

কোন জেলায় কাকে দায়িত্ব দিল নবান্ন?

জানানো হয়েছে, পূর্ব বর্ধমানের দায়িত্বে রয়েছেন ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের নীলম মীনা, ল্যান্ড রেকর্ড ও সার্ভে দফতরের ডিরেক্টর বিভু গোয়েল। এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের দায়িত্বে রয়েছেন চার জন উচ্চপদস্থ আধিকারিক। এই চারজন হলেন, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের সচিব সুরেন্দ্র গুপ্ত, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সিনিয়র স্পেশ্যাল সচিব প্রিয়াঙ্ক সিংহ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের বিশেষ সচিব ইউনিস ঋষিণ ইসমাইল এবং কৃষি দফতরের বিশেষ কমিশনার হৃষীকেশ মোদী।

অন্যদিকে হুগলির দায়িত্বে রয়েছেন শিক্ষা দফতরের সচিব বিনোদ কুমার, পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অভিষেক কুমার তিওয়ারি। এবং বীরভূম জেলার দায়িত্ব পেয়েছেন শিল্প দফতরের সচিব বন্দনা যাদব, অর্থ দফতরের সচিব দেবীপ্রসাদ করণম। এইমুহুর্তে বীরভূমে বহু নদী ও খালের জল উপচে গ্রামে ঢুকে পড়েছে। জানানো হয়েছে, প্রতিটি জেলা থেকে আপডেট সংগ্রহ করে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হচ্ছে।

প্লাবিত হওয়ার মুখে একাধিক এলাকা!

ইতিমধ্যে ঝাড়খণ্ডে টানা বৃষ্টির কারণে জলাধারে জলের চাপ ব্যাপক বেড়েছে। আর এই বিপুল পরিমাণ জল দামোদর নদ বেয়ে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর ব্যারেজ হয়ে হাওড়া, হুগলি এবং পূর্ব বর্ধমানের দিকে প্রবাহিত হবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। যার ফলে হুগলির খানাকুল, আরামবাগ এবং হাওড়ার আমতা, উদয়নারায়ণপুরের মতো এলাকাগুলি প্রায় প্লাবিত হওয়ার মুখে। রাজ্যের সেচ দফতরের তরফে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলির বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: সঞ্জয়ের বেকসুর খালাসের আবেদন গ্রহণ করল হাইকোর্ট! শুনানি সেপ্টেম্বরে

উল্লেখ্য, অতীতেও একাধিক বার DVC-র জল ছাড়ার সমালোচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং এই বন্যাকে ‘ম্যানমেড’ বলেও অভিহিত করেছিলেন। গতকালও, নবান্নে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক-শেষে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী।

সেখানেও DVC-র জল ছাড়ার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন। যদিও ডিভিসির তরফে এক কর্তা জানিয়েছেন, তাঁরা যে পরিমাণ জল ছাড়ার জন্য নির্দেশ পান, সেটুকু জল ছাড়া হয়। ফলে এই ভাবে দোষারোপের কোনও যুক্তি নেই।

Leave a Comment