সহেলি মিত্র, কলকাতা: বাংলার ডিএ বা মহার্ঘ্য ভাতা মামলা (Bengal DA Case) নিয়ে দীর্ঘ টানাপোড়েন চলছে। এই মামলার কবে নিষ্পত্তি ঘটবে, কবে সরকারি কর্মী থেকে শুরু করে পেনশনভোগীরা কবে নিজেদের হকের টাকা পাবেন সেই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। মঙ্গলবার ৫ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের দেওয়া মহার্ঘ্য ভাতা (ডিএ) আইনগত অধিকার হিসেবে বিবেচিত হতে পারে কিনা তা সম্পর্কিত একটি মামলার শুনানি শুরু করেছে। বিচারপতি সঞ্জয় কারোল এবং প্রশান্ত কুমার মিশ্রের একটি বেঞ্চ রাজ্য সরকার এবং কর্মচারী ইউনিয়ন উভয়কেই পূর্ববর্তী হাইকোর্টের একটি আদেশের বিষয়ে তাদের মতামত ব্যাখ্যা করতে বলেছে যেখানে মৌলিক অধিকারের প্রেক্ষাপটে ডিএ উল্লেখ করা হয়েছিল। এসবের মাঝে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্যে বলল কিছুটা হলেও মহার্ঘ্য মিটিয়ে দিক সরকার।
কিছুটা হলেও DA মেটাক সরকার: সুপ্রিম কোর্ট
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বকেয়া নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারি কর্মীরা। সুপ্রিম কোর্টে চলছে মামলা। তারপরেও আশানুরূপ কোনও খবর পাচ্ছেন না সরকারি কর্মীরা। মাঝে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বকেয়া ডিএর ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল শীর্ষ আদালতের তরফে, সেই সময় কিছুটা হলেও মনে আসার সঞ্চার হয়েছিল সরকারি কর্মীদের মধ্যে। তবে সেই টাকা সময়ের মধ্যে মেটাইনি পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ফলে নতুন করে মন ভাঙে সকলের। এরই মধ্যে বিচারকদের পর্যবেক্ষণ এবং রাজ্য সরকারের যুক্তি ও পাল্টা যুক্তির মধ্যে মামলাটি এখন চূড়ান্ত রায়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই শুনানিতে বিচারকরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন, যা আবারও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে আশা জাগিয়ে তুলেছে।
শুনানির শুরুতেই মাননীয় বিচারপতিরা রাজ্য সরকারকে ডিএ-র একটি অংশ দেওয়ার পরামর্শ দেন। বিচারপতিদের মতে, রাজ্যের বাইরে কর্মরত কর্মচারীরা ডিএ পাচ্ছেন, অন্যদিকে রাজ্যের অভ্যন্তরে কর্মচারীরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা এক ধরণের বৈষম্য। এই বৈষম্য দূর করার জন্য, বিচারপতিরা সরকারকে বলেন, “দয়া করে এটি করুন। যে কোনও পরিমাণ দিন।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে বিচারপতিরা ডিএ প্রদানের বিষয়ে তাদের সদিচ্ছা প্রকাশ করেন।
ডিএ মৌলিক অধিকার নয়, যুক্তি সরকারের
উভয় পক্ষই আদালতকে বলেছে যে সংবিধানের অধীনে ডিএ মৌলিক অধিকার নয়। রাজ্য সরকার বলেছে যে ডিএকে নিশ্চিত অধিকার হিসাবে গণ্য করার কোনও আইনি বিধান নেই। এটি আরও উল্লেখ করেছে যে প্রতিটি রাজ্য তার আর্থিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে কত ডিএ দিতে হবে তা নির্ধারণের জন্য নিজস্ব পদ্ধতি অনুসরণ করে।
আরও পড়ুনঃ রাজ্যের অফিসার আর নয়, নির্বাচনের আগেই ভোটার কার্ড নিয়ে বড় বদল নির্বাচন কমিশনের
কর্মচারী ইউনিয়নগুলি, আইনি অবস্থান নিয়ে বিতর্ক না করে, প্রশ্ন তুলেছে যে কেন রাজ্য কেন্দ্রীয় সরকারের মতো একই ডিএ হার অফার করে না। জবাবে, রাজ্যের পক্ষে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, ভারতজুড়ে ডিএ-র জন্য কোনও একক নিয়ম নেই এবং প্রতিটি রাজ্য স্বাধীনভাবে এটি নির্ধারণ করে। আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে শুনানি চলবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকারি কর্মচারীরা এই মামলাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন, কারণ আদালতের সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে ডিএ-র মতো বেতনের উপাদানগুলিকে কীভাবে বিবেচনা করা হবে তা প্রভাবিত করতে পারে।