প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: চলতি বছর গত এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এক লহমায় চাকরি চলে গিয়েছিল প্রায় ২৬ হাজার স্কুল সার্ভিস কমিশনের চাকরিপ্রার্থীদের। হকের চাকরি রাতারাতি চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেনি কেউই। তাই নিজেদের চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকরা। দিল্লিতেও অবস্থান করে এসেছেন তাঁরা। আর এবার সেই আন্দোলনেরই এক যোদ্ধা বিনা বিচারেই স্বাধীনতা দিবসের দিন সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। মাত্র ৩৭ এই ব্রেন স্ট্রোকে চলে গেলেন চাকরিহারা শিক্ষক সুবল সোরেন।
তীব্র অবসাদই মৃত্যুর কারণ!
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর থেকেই তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন শিক্ষক সুবল সোরেন। ভবিষ্যতে কী করবেন সেই নিয়ে চিন্তা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল তাঁকে। এদিকে আদালতের নির্দেশে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বেতন মিলবে। তারপর কী হবে? আর এই চিন্তার ঠেলায় ধীরে ধীরে তাঁর শরীর খারাপ হতে শুরু করে। শেষে গত সোমবার অর্থাৎ ১১ আগস্ট স্ট্রোক হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ডেবরার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতার আর এন টেগোর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। দিন দুয়েক ধরে ওই হাসপাতালে চলছিল চিকিৎসা। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।
শোকাহত গোটা পরিবার!
অকালে স্বামীর এই মৃত্যুর ঘটনা মেনে নিতে পারেনি স্ত্রী সন্ধ্যা সোরেন। এদিন তিনি সংবাদমাধ্যমে জানান, “অনেক চিন্তা করত যে কী হবে না হবে! চাকরি নিয়ে সবসময় চিন্তা করত। চাকরি তো চলেই গেছে। অগাস্ট মাসে যে রিভিউ পিটিশন ছিল, বলেছিল যে কোনওকিছু একটা হবে। দিয়ে যখন কিছুই হল না, আবার অনেক ভেঙে পড়ল। হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ল। বেশি চাপ নিতে পারল না। ওই চাকরি বাতিলের জন্য একমাত্র দায়ী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন আমি কী করে থাকব? আমার বাচ্চার ২ বছর বয়স। টেনশন আমি বেশি নিতে পারছি না।” তবে চাকরিপ্রার্থীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি প্রশাসন।
আরও পড়ুন: পুজোর সামগ্রী বিক্রির দোকানের আড়ালে কারসাজি! বোমা মশলা-সহ গ্রেফতার তৃণমূল নেতা
এদিকে, ‘যোগ্য’ চাকরিহারা শিক্ষকের মৃত্যুতে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতির। মুকুন্দপুরে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মিছিলের আগে নাকি দেহ হাইজ্যাকের চেষ্টা করেছে পুলিশ। তবে সেই দাবি অস্বীকার করে পুলিশ। এরপর পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় সুবল সোরেনের মৃতদেহ পৌঁছলে বেশকিছু চাকরিহারা শিক্ষক ও স্থানীয় মানুষজন দেহ আটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। অবরুদ্ধ হয়ে যায় ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক। শেষপর্যন্ত বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে ডেবরা থানার পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।