প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: বছর ঘুরলেই ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন, আর সেই নির্বাচনকে সামনে রেখেই একের পর এক কর্মসূচি পালন করে চলেছে শাসকদল থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্তু ভোটের ব্যবস্থাপনা নিয়ে যেখানে রাজ্যের পরিস্থিতি সরগরম সেখানে আরেকদিকে বিপদ বাড়ছে রাজ্যের। একের পর এক দুর্নীতির খবর উঠে আসছে শিরোনামে। যার মধ্যে ফের উঠে এল শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির খবর। যা নিয়ে হাইকোর্ট (Calcutta High Court) চত্বরে হুলুস্থুল কাণ্ড।
শুরু থেকেই নিয়োগ ক্ষেত্র মামলা নিয়ে গলদ
উল্লেখ্য ২০২৩ সালের ১২ মে কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৩৬ হাজার কর্তব্যরত প্রাথমিক শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ কিন্তু পরে সেটি কমে দাঁড়ায় ৩২ হাজারে৷ বিচারপতি স্পষ্ট নির্দেশ দেন যে তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে রাজ্যকে। সেখানে যোগ্য এবং উত্তীর্ণদের চাকরি বহাল থাকবে। এরপর সিঙ্গল বেঞ্চের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যায় পর্ষদ। সেই সময় ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের চাকরি বাতিল সংক্রান্ত রায়ের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে। তবে ডিভিশন বেঞ্চও জানিয়ে দেয় যে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ মতো নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া পর্ষদকে শুরু করতে হবে। তখন থেকে শুনানি চলছে ৷
দুর্নীতি হয়নি বলে যুক্তি রাজ্য সরকারের
গত ২৯ অক্টোবর প্রাথমিকে ৩২ হাজার চাকরি বাতিল সংক্রান্ত মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ও রাজ্যের কাছে একাধিক প্রশ্নের উত্তর চেয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে দীর্ঘ শুনানিতে মামলাকারী পক্ষের আইনজীবীরা এই দুর্নীতি কীভাবে হয়েছে, তা দাবি করেন ৷ এমনকী এই দুর্নীতিতে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগাযোগ ছিল বলেও দাবি করেছেন তাঁরা। মঙ্গলবার ওই সংক্রান্ত মামলায় রাজ্য জানায়, “নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ভুলত্রুটি বা সামান্য গলদ থাকা আর দুর্নীতি এক জিনিস নয়। ৪৩ হাজারেরও বেশি শিক্ষকের মধ্যে মোট ৯৪ জন প্রার্থী টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ায় চাকরি বাতিল করেছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ৷ এর সঙ্গে ৩২ হাজার শিক্ষকের কোনও যোগ নেই।”
কী বলছেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট?
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত এই দুর্নীতি মামলা নিয়ে দাবি করেন, “ সামান্য অংশে কিছু পদ্ধতিগত ত্রুটি ধরা পড়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সেটা নিজেরাই সংশোধন করেছে। তাই এ জন্য গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলা ঠিক নয়।” এদিন অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত সওয়াল করেন যে, ‘‘সিবিআই তদন্তে দুর্নীতির কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কেবলমাত্র কিছু প্রিন্টিং বা ডেটা প্রসেসিং সংক্রান্ত ত্রুটি ধরা পড়েছে। কারণ, এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি কোনও নিয়োগ সংস্থা নয়। তারা শুধুমাত্র ডেটা প্রসেসিংয়ের কাজ করেছে। পরীক্ষার্থীদের নম্বর দিয়েছেন পরীক্ষকেরা। তাদের কাজটা ছিল মূলত ছাপাখানার কাজ। অর্থাৎ এস বসু রায় কোম্পানির মেধাতালিকা প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে কোনও ভূমিকা ছিল না।”
আরও পড়ুন: চাকরিপ্রার্থীরা অতিরিক্ত ১০ নম্বর পাবে? SSC-র নিয়োগ নিয়ে বড় মন্তব্য হাইকোর্টের
চাকরি বাতিল প্রসঙ্গে আদালত প্রশ্ন তোলে যে দুর্নীতি যখন হয়নি তাহলে ৯৬ জন প্রশিক্ষিত প্রার্থীর চাকরি বাতিল করতে হল কেন? সেই সময় রাজ্য জবাব দেয়, ওই ৯৬ জনকে পর্ষদের তরফে কোনও সুপারিশ করা হয়নি। আর সেই কারণেই তাদের চাকরি বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু এদিকে এই নিয়োগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ‘বিরাট দুর্নীতি’ বলে সামনে আনা হচ্ছে। জানা গিয়েছে আগামী সপ্তাহেই এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।