প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) ৩২,০০০ প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের মামলা নিল এক নতুন মোড়! দুর্নীতি যে আদৌ হচ্ছে তা নিয়ে এবার জোরালো প্রমাণ চাইল বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর এজলাস। ইতিমধ্যেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলাকে ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। তার উপর কিছুদিন আগে অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করার পর পরিস্থিতি আরও সংকটপূর্ণ, এসব কিছুর মাঝেই প্রাথমিক টেট পরীক্ষায় ৩২ হাজার চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ এখনও আদালতে ঝুলে। দিনের পর দিন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থার এই বেহাল দশা নিয়ে এবার উঠছে অজস্র প্রশ্ন।
ঝুলেই রয়েছে প্রাথমিকের মামলা
২০১৪ সালে টেট পরীক্ষায় ৪২ হাজার ৯৪৯ জনকে নিয়োগপত্র দেয় পর্ষদ। কিন্তু একাধিক বেনিময়ের অভিযোগ তুলে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী। সেই মামলার ভিত্তিতে হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ২০২৩ সালের ১৬ মে প্রশিক্ষণহীন ৩২ হাজার শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করে তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল রাজ্য সরকার। তখন বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ সেই রায়ে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন। মামলার জল সুপ্রিম কোর্টে গড়ালেও শীর্ষ আদালত এই মামলা রাজ্যের উচ্চ আদালতেই ফেরত পাঠায়। তারপরই একের পর এক শুনানি হয়েই যাচ্ছে।
অ্যাপটিটিউড টেস্ট নিয়ে সওয়াল বিচারপতির
নিউজ ১৮ বাংলার রিপোর্ট অনুযায়ী, গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার, কলকাতা হাইকোর্টে প্রাথমিক চাকরি বাতিল মামলা ওঠে বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রর ডিভিশন বেঞ্চে। সেই মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবী সৌম্য মজুমদারের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন যে, “আপনারা যেভাবে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন তার সপক্ষে জোরালো প্রমাণ কই। অ্যাপটিটিউড টেস্ট নেওয়া হয়নি বলে যে অভিযোগ, সেখানে কেউ বলছে নেওয়া হয়েছে। কেউ বলছে নেওয়া হয়নি। অন্য দিকে প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। আসল সত্যিটা কী?”
আরও পড়ুন: অবশেষে গ্রেফতার রাকেশ সিং! কংগ্রেস দফতর ভাঙচুরের ঘটনায় ধৃত বেড়ে ৫
পরবর্তী শুনানি কবে?
এদিন আদালতে মামলাকারীদের উদ্দেশে বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী আরও বলেন যে, “ ধরুন আপনারা যা বলছেন সেটা মেনে নিলাম। অনিয়ম হয়েছে। তাহলে আমরা কীভাবে এই চাকরি বাতিল করব? অত্যন্ত সিরিয়াস ম্যাটার। এখন যদি প্রায় ৩৩ হাজার চাকরি বাতিল করে দেয় হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ, তাহলে যারা এই নির্দেশের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তারা আদালতে এসে বলবে তাদের কথা শুনতে হবে। এর শেষ কোথায়? বছরের পর বছর আমাদের তাহলে মামলা শুনতে হবে“। এমনকি বিচারপতি আশঙ্কা প্রকাশ করে এও বলেন যে, ”যদি অভিযোগ সত্যি হয় তাহলে ৭-৮ বছর ধরে চাকরি করে যাবে একজন অযোগ্য প্রার্থী! তাহলে? আদালতের কী করা উচিত? মামলাকারীদের কাছে কোন উত্তর আছে?” শেষ পর্যন্ত আগামী ১১ই সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এবং আদালত মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবী সৌম্য মজুমদারদকে তার বক্তব্য জানাতে নির্দেশ দিয়েছে।