নজর এড়িয়ে গলতে পারবে না মাছিও, পাকিস্তান-চিনের ঘুম ছোটাবে ভারতের ‘ত্রিনয়ন’!

India’s Anti-Stealth Radar which can detect and neutralize fifth generation stealth jets

বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষায় এক পায়ে এগিয়ে ত্রিনয়ন (India’s Anti-Stealth Radar)। দেশে যখন প্রয়োজনীয় ইঞ্জিনের অভাবে আটকে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি তেজস যুদ্ধবিমানের উৎপাদন, সেই পরিস্থিতিতে ভারতীয় বায়ুসেনাকে আশার আলো দেখাচ্ছে উচ্চ কম্পাঙ্কের রেডার ত্রিনয়ন। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, ত্রিনয়নের চোখ এড়িয়ে ভারতের সীমান্তে গলতে পারবে না একটা মাছিও। মূলত চিন, পাকিস্তানের মতো বিরোধীপক্ষের রাতের ঘুম ছোটাতে যথেষ্ট নয়া দিল্লির হাতে আসা তৃতীয় নয়ন বা উচ্চ কম্পাঙ্কের রেডার।

সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ত্রিনয়নে ভরসা আছে ভারতের

একাধিক রিপোর্ট অনুযায়ী, সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে তৃতীয় নয়ন বা রেডারটি। এটি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা বা DRDO। মূলত ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন এর ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড রিডার ডেভেলপমেন্ট এস্টাবলিশমেন্ট শাখার হাত ধরে তৈরি হয়েছে ভারতীয় আকাশ প্রতিরক্ষার পুরু বর্ম বা রেডারটি। এর বাণিজ্যিক উৎপাদনের দায়িত্ব রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের হাতে।

DRDO র গবেষক দল জানায়, চলতি বছরের একেবারে শুরুর দিকেই প্রকাশ্যে আসা এই রেডারটি পঞ্চম এবং ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানকে চিহ্নিত করে সেটিকে নিখুঁতভাবে ধূলিস্যাৎ করতে সক্ষম। রিপোর্ট বলছে, এই উচ্চ কম্পাঙ্কের রেডারটির পাল্লা 400 থেকে 500 কিলোমিটার পর্যন্ত। অর্থাৎ এই রেঞ্জের মধ্যে থাকা যেকোনও যুদ্ধবিমান, ড্রোন এমনকি ছোট রকেটও আকাশেই গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম নয়া দিল্লির এই ক্ষেপণাস্ত্র।

না বললেই নয়, সাধারণত রেডারের চোখ ফাঁকি দিয়ে পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান সহজেই সীমানা অতিক্রম করে এক দেশ থেকে অন্য দেশে প্রবেশ করতে পারে। এটি সাধারণত হয় যখন পঞ্চম প্রজন্মের কোনও যুদ্ধবিমান রেডিও তরঙ্গকে একেবারে শুষে নেয়। তবে ভারতের হাতে থাকা উচ্চ কম্পাঙ্কের রেডার বা তৃতীয় নয়নের চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢোকার ক্ষমতা হবে না পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানগুলির মধ্যে থাকা কিছু দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েই এই বিশেষ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করেছে DRDO।

প্রতিরক্ষা মহলে কান পাকলে শোনা যাবে, সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ভারতের তৃতীয় নয়ন রেডারের নজর এড়িয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না আমেরিকার গর্ব পঞ্চম প্রজন্মের F-35 ও। এছাড়াও চিনের লড়াকু যুদ্ধবিমান J-20 এবং JF-17 সাধারণত সহজেই রেডারগুলিকে ফাঁকি দিতে পারে। তবে ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা বলছে, নয়া দিল্লির ত্রিনয়ন খুব সহজেই এই ধরনের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন যুদ্ধবিমানগুলিকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি সেগুলিকে নিউট্রালাইজ করতে পারবে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়, যুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনার লড়াকু যুদ্ধবিমান ধ্বংস করতে পাকিস্তান যে কুইক রিঅ্যাকশন সারফেস টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে থাকে সেই হাতিয়ারও গুঁড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে ভারতের উচ্চ কম্পাঙ্কের এই রেডারের। সবমিলিয়ে, যুদ্ধের সময় শত্রু নিধনে ভারতীয় বায়ুসেনার অন্যতম বড় বর্ম এবং অস্ত্র হবে DRDO র ত্রিনয়ন বা তৃতীয় নয়ন।

অবশ্যই পড়ুন: কেন রিঙ্কু সিংকে বারবার রিটেইন করে KKR? জানেন না অনেকেই

উল্লেখ্য, এর আগে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি রেডারটির যে প্রথম সংস্করণ বানিয়েছিলেন সেটির পাল্লা ছিল 400 কিলোমিটার পর্যন্ত। পরবর্তীতে নানান গবেষণা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে এই রেডারের রেঞ্জ বাড়ানো হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, এই রেডারের উচ্চ কম্পাঙ্ক 30 থেকে 300 বা তারও বেশি মেগাহার্ৎজ়ের মধ্যেই ওঠানামা করে।

Leave a Comment