প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: বিধানসভা ভোটে এবার নয়া উত্তেজনা নন্দীগ্রামে! শুভেন্দু অধিকারীর ডেরায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে আগত নির্বাচনে শাসকদলের তরফে প্রার্থী হতে পারেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee)! তুমুল আলোচনা শুরু অন্দরমহলে। বছর ঘুরলেই ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন। তাই এখন থেকেই প্রতিটি জেলার স্তরে নির্বাচন প্রার্থী নিয়ে জোরকদমে বৈঠক শুরু করে দিয়েছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে এবারের নির্বাচনে প্রত্যেকটি বিধানসভা কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ হলেও সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে নন্দীগ্রাম। সেক্ষেত্রে এবার প্রার্থী নিয়ে নয়া চাল ফেলতে চলেছে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নন্দীগ্রাম নিয়ে অন্য ভাবনা শাসকদলের
সম্প্রতি ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে রাজ্যের প্রায় সব জেলায় ব্লক ধরে বৈঠক শুরু করেছেন। আগামী ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব বৈঠক শেষ হওয়ার কথা, কিন্তু একমাত্র নন্দীগ্রামের জন্য জেলা বৈঠকের জন্য রাখা হয়েছে আলাদা দিন। ১৩ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেই বৈঠক হবে বলে ধারণা। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে নন্দীগ্রামকে ঘিরে শাসকদলের যে আলাদা প্রস্তুতি, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আর তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে সম্ভাব্য প্রার্থী কে হবে। এমতাবস্থায় এবার দলের তরফ থেকে শোনা যাচ্ছে দলবদলু প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম।
শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এবার লড়বেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়?
আনন্দবাজারের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইতিমধ্যে নন্দীগ্রামে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামকে ঘিরে নানা জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয় এই খবর নিয়ে সম্প্রতি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, “ আমাকে এখনও কেউ কিছু বলেনি। এমনকিছু জানেনও না। এই প্রথম শুনলাম। যা বুঝছি আসলে পুরোটাই ‘রটনা’। ” এক্ষেত্রে অনেকের বক্তব্য কেন শাসকদল রাজীবকেই বিরোধীদের বিপরীতে দাঁড়াতে চলেছে। আর তাতেই উঠে আসছে একাধিক কারণ। যার মধ্যে অন্যতম তিনটি কারণ হল, এক, রাজীবের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও সাংগঠনিক দায়িত্ব সামলানোর অনেক রেকর্ড হয়েছে। যেটা ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে তমলুক কেন্দ্রে দেখা গিয়েছিল।
দ্বিতীয় কারণ হল, নন্দীগ্রামে বরাবরই তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক গোষ্ঠীকোন্দল রয়েছে। ফলে সেখানে তৃণমূল এমন কাউকে প্রার্থী করতে চায়, যাঁর সঙ্গে স্থানীয় নিম্ন স্তরের রাজনীতির কোনও সম্পর্ক থাকবে না। অর্থাৎ সেখানে জন্য স্থানীয় নেতৃত্বকে প্রার্থী করা যাবে না। তাই সেক্ষেত্রে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সেরা। অন্যদিকে তৃতীয় কারণ হল, তমলুক লোকসভার অন্তর্গত হওয়ায় নন্দীগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে রাজীব আগেই খুব পরিচিত। তাই সেক্ষেত্রে বাড়ছে এই জল্পনা। যদিও এখনই এই নিয়ে কোনো চরম সিদ্ধান্ত নেয়নি তৃণমূল সুপ্রিমো।
আরও পড়ুন: ‘এত জীবন ধ্বংস করেও সওয়াল?’ দাগিদের কথা বলে সুপ্রিম কোর্টে ভর্ৎসিত রাজ্য সরকার
২৬ এর নির্বাচনে বড় চমক শাসকদলের
২০২১ সালের ভোটের আগে শুভেন্দু অধিকারীর তৎপরতায় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর ডোমজুড়ে হেরে যাওয়ায় তার কয়েক মাসের মধ্যেই পুনরায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে ফিরে আসেন। আর তারপরেই তাঁকে ত্রিপুরায় সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়। সম্প্রতি হাওড়া জেলা পরিষদে মেন্টর করা হয়েছে।
তবে নন্দীগ্রামের প্রার্থী জল্পনায় এটুকু অন্তত স্পষ্ট যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২৬ সালের ভোটে নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়াবেন না। এমতাবস্থায় নন্দীগ্রামের আসন নিয়ে আগামী বিধানসভা ভোটের আগেই রাজ্য রাজনীতিতে জোর আলোড়ন শুরু হয়েছে। এবার দেখার পালা ভবিষ্যতে শুভেন্দু বনাম রাজীব এই সমীকরণে কতটা বদল আসতে চলেছে।