সহেলি মিত্র, কলকাতা: নবান্নের (Nabanna) বহু চেষ্টাতেও মিলছে না পেনশন। বারবার বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বাম আমলের পুরনো বিজ্ঞপ্তি। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তির মৃত্যুই যেন কাল হল তাঁর স্ত্রীর। আজ কথা হচ্ছে সুকুমার পিড়িকে নিয়ে। ২০০৩ সালে অবসরগ্রহণের সময় সুকুমার পিড়ি ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর ডিএম অফিসের বড়বাবু, আপার ডিভিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে ছিলেন তিনি। অবসরের পর ঠিকঠাক পেনশনও পাচ্ছিলেন। কিন্তু, তাঁর মৃত্যুই যেন কাল হয়ে দাঁড়ায় পরিবারের জন্য। কারণ পেনশন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী মায়া পিড়ি। আর এর বড় কারণ বাম আমলের একটি নিয়ম। নিশ্চয়ই ভাবছেন কী সেই নিয়ম? তাহলে বিশদে জানতে চোখ রাখুন আজকের এই প্রতিবেদনটির ওপর।
বাম আমলের নিয়মের জেরে আটকে পেনশন
আসলে বাম আমলে, ১৯৯৪ সালের নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয়বার বিয়ে করলে তা দফতরকে অবশ্যই জানাতে হবে। বিষয়টি তৎকালীন ডিএম বা জেলাশাসককে জানানোর কথা ছিল। অবসরগ্রহণের প্রায় ১৪ বছর এবং প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পরে সুকুমার পিড়ি দ্বিতীয় বিবাহ করেন। কিন্তু সেই বিবাহ রেজিস্ট্রির তথ্য তিনি ডিএম অফিসে দেননি বা জানাননি। এদিকে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে সুকুমারবাবুর মৃত্যু হয়। এই কারণে ৭১ বছর বয়সি মায়াদেবীকে রাজ্য পেনশন দিতে পারছে না।
সূত্রের খবর, নবান্নের হাজার হস্তক্ষেপের পরেও নাকি সুরাহা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বিষয়টিকে মানবিকভাবে বিচার করে তাঁর পেনশন চালু করার আর্জি জানিয়েছেন মায়া দেবী। টানা দুই বছর ধরে চলছে আইনি লড়াই, কিন্তু ফলাফল সেই শূন্য। ডিএম অফিস, রাজ্য অর্থদপ্তর থেকে শুরু করে এজি বেঙ্গল সংশ্লিষ্ট সব অফিসেই ছোটাছুটি চলছে।কারণ, সমস্ত ক্ষেত্রেই জগদ্দল পাথরের মতো বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বাম আমলের অর্থ দফতরের বিজ্ঞপ্তি নম্বর ১৮৮৬ এফ। তবে মায়াদেবী যাতে নিজের হকের টাকা পান তা দেখছে নবান্ন।
আরও পড়ুনঃ বাড়ি কেনার জন্য ২৫ লক্ষ টাকা দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার! কারা পাবেন?
ময়দানে নবান্ন
দ্বিতীয় বিবাহের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো বাধ্যতামূলক করে বিজ্ঞপ্তি জারি কেন? অভিজ্ঞ আমলাদের বক্তব্য, অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিকের পেনশন পেমেন্ট অর্ডারে (পিপিও) তাঁর স্ত্রীর নামের উল্লেখ থাকে। স্বামীর মৃত্যুর পর শুধু সেই মহিলাই পেনশনের আইনি অধিকারী। এক্ষেত্রে সুকুমারবাবুর প্রথম স্ত্রীর নামটিই শুধু ছিল। তিনি মারা গিয়েছেন ২০১৮ সালে। তার পরের বছর দ্বিতীয় বিবাহ রেজিস্ট্রির করেন সুকুমারবাবু। ফলে আইন অনুযায়ী দ্বিতীয় স্ত্রীর পেনশন পেতে বাধা নেই। কিন্তু মায়া পিড়ির সঙ্গে বিবাহের বিষয়টি সুকুমারবাবু অফিসকে অবগত করেননি এবং তার উল্লেখ নেই পিপিওতেও। যে কারণে এখন যত সমস্যা তৈরি হয়েছে। এখন দেখার মায়াদেবী এই দীর্ঘ লড়াইয়ে জয়ী হন কিনা।