সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: আবারও চরম রাজনৈতিক সংকটের মুখে নেপাল! কেপি শর্মা ওলি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পরেই দেশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে চরম অস্থিরতা। এবার নতুন অন্তরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে। প্রাথমিকভাবে নাম উঠে এসেছিল নেপালের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকির (Sushila Karki)। সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে যুব সমাজ, সবাই তাঁকে দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেছিল। তবে শেষ মুহূর্তে কার্কি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, তিনি এই দায়িত্ব নিতে নারাজ।
তাহলে এখন নেপালের ক্ষমতার হাল কে ধরবেন? কে সামলাবেন দেশটির দায়িত্ব? সামনে আসছে এক নতুন নাম—কুলমান ঘিসিং, যিনি বিদ্যুৎ বোর্ডের প্রধান হিসেবে নেপালের দীর্ঘ লোডশেডিং সমস্যার সমাধান করেছিলেন। তবে এবার কি তিনি বিদ্যুতের মতো রাজনীতির অন্ধকার কাটাতে পারবেন?
সুশীলা কার্কি কে?
প্রথমত জানিয়ে রাখি, নেপালের ইতিহাসে প্রথম মহিলা বিচারপতি ছিলেন সুশীলা কার্কি। মূলত সাহসী রায় দেওয়ার জন্যই তিনি সংস্কারক বিচারপতি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। 1975 সালে তিনি ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। এরপর 1978 সালে কাঠমান্ডু ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক হন।
জানা গিয়েছিল, তাঁর নেতৃত্বে জয়া প্রকাশ গুপ্ত দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন, যা নেপালের ইতিহাসে প্রথমবার কোনও মন্ত্রীর কারাদণ্ড ছিল। এমনকি শান্তিরক্ষা মিশনে দুর্নীতি, নিজগড় ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের বিতর্ক কিংবা মহিলাদের নাগরিকত্ব আইনের অগ্রগতি, সবকিছুতেই তাঁর ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে 2017 সালে পুলিশ প্রধান নিয়োগের বিতর্ককে কেন্দ্র করে সরকারের সঙ্গে তাঁর সংঘাত হয়। আর তখন তাঁর বিরুদ্ধে সাংসদে অভিযোগপত্র আনা হয়েছিল।
সুশীলা কার্কিকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব
News 18-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশটির চরম সংকটের মুখে প্রধানমন্ত্রী ওলির পদত্যাগের পর বুধবার গভীর রাতে সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল নিজে ধাপাসির বাড়িতে গিয়ে কার্কিকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করেন। এমনকি রাত দুটো পর্যন্ত বৈঠকে হয় বলে খবর। প্রথমে কার্কি সম্মতিও জানিয়েছিলেন। তবে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও জনসমালোচনার কারণে শেষমেষ তিনি নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন। আসলে কার্কিকে শুরু থেকেই দ্বিধায় ছিলেন। অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার মতো আগ্রহ তাঁর ছিল না। এমনটাই জানাচ্ছে নেপালের বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ মহল।
আরও পড়ুনঃ প্রতীক্ষার অবসান! অবশেষে ভাবাদিঘিতে শুরু রেলের কাজ
আলোচনায় কুলমান ঘিসিং
তবে সুশীলা কার্কি সরে দাঁড়াতেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন কুলমান ঘিসিং। তাঁকে সাধারণ নেপালের মানুষ মূলত বিদ্যুতের আলো মনে করে। দীর্ঘ বছর ধরেই নেপালে দৈনিক 14 থেকে 18 ঘন্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাট ছিল সাধারণ ঘটনা। সেই ভয়াবহ অবস্থা থেকে দেশকে মুক্তি দিয়েছিলেন তিনি। তবে এবার প্রশ্ন উঠছে, রাজনৈতিক সংকট সামলাতেও কি তিনি বিদ্যুতের মতো চমক দেখাতে পারবেন? সবটা আগামী দিন দেখা যাবে।