পটল চাষ করে মাসে আয় করুন ১ লক্ষ টাকা! দেখে নিন সম্পূর্ণ প্রসেস

সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: জমিতে কোনো লাভজনক ফসল ফলানোর চিন্তা ভাবনা করছেন? তাহলে আপনার জন্য হতে পারে পটল চাষ (Parwal Cultivation) একেবারে সেরা বিকল্প। কারণ গ্রামীণ হাট-বাজার থেকে শুরু করে শহরের বাজার, সব জায়গাতেই পটলের চাহিদা আকাশছোঁয়া থাকে। আর এই সবজি শুধুমাত্র স্বাদের দিক থেকে নয়, বরং দাম এবং চাহিদার দিক থেকেও মধ্যবিত্তদের মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম। তো চলুন দেখে নেওয়া যাক, কীভাবে আপনি পটল চাষ শুরু করবেন এবং লাভবান হবেন। 

মাটি তৈরি এবং প্রস্তুতি

প্রসঙ্গত পটল চাষের জন্য সবথেকে উপযুক্ত হল বেলে দোআঁশ বা দোআঁশ মাটি। আর এই ধরনের মাটি জল ধরে রাখে না, আবার পর্যাপ্ত আদ্রতা বজায় রাখে। তাই জমি গভীরভাবে চাষ করে গোবর কম্পোস্ট মিশিয়ে দিতে হবে। এতে মাটির উর্বরতা শক্তি আরো বাড়বে এবং গাছ ভালোভাবে পুষ্টি পাবে।

বীজ বপনের নিয়ম

প্রসঙ্গত, পটল গাছ সাধারণত বুনো ভাবে বেড়ে ওঠে। তাই বপন করার সময় অবশ্যই দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সারির মধ্যে মিনিমাম 1.5 থেকে 2 মিটার দূরত্ব রাখতে হবে। আর গাছের মধ্যে দূরত্ব রাখতে হবে 50 থেকে 60 সেন্টিমিটার। পাশাপাশি প্রায় 2-3 সেমি থেকে গভীরে বীজ পুঁততে হবে। আর বপনের পর হালকা সেচ বানিয়ে দিতে হবে, যাতে বীজ ভালোভাবে অঙ্কুরিত হয়।

তবে পটল চাষের ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে জল দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হ্যাঁ, বীজ বপনের পর আপনাকে প্রথমে সেচ দিতে হবে। এরপর নির্দিষ্ট ব্যবধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় জল দিতে হবে। কিন্তু খেয়াল রাখবেন, জমিতে জল যাতে জমে না থাকে। নাহলে শিকড় পচে যেতে পারে।

ব্যবহার করুন জৈব ও রাসায়নিক সার

চাষের শুরুতেই মাটিতে জৈব সার বা গোবর কম্পোস্ট ইত্যাদি দিতে পারেন। এর সঙ্গে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশ সমানুপাতিকভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। আর গাছের বৃদ্ধির প্রতিটি ধাপেই সার ব্যবহারের ধরন বদলাতে হবে। এতে যেমন একদিকে ফলন বাড়বে, তেমন ফসলের গুণমান বজায় থাকবে এবং মোটা অংকের টাকা লাভ করতে পারবেন।

তবে হ্যাঁ, কিছু কিছু পোকা রয়েছে, যেগুলি পটল চাষে বিরাট ক্ষতি করে। সেগুলি হল পড বোরার, এফিড, লিফ বোরার ইত্যাদি। আর এই সমস্ত পোকা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনে অর্গানিক কীটনাশক বা হালকা রাসায়নিক স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। পাশাপাশি ডাউনি মিলডিউ বা পাউডারি মিলডিনের মতো ছত্রাকগুলির সংক্রমণ ঠেকাতে গাছে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।

ফসল তোলা এবং সংরক্ষণ

পটল মোটামুটি 90 থেকে 100 দিনের মধ্যেই ফলন দেওয়া শুরু করে। আর যখন ফল হালকা সবুজ ও পরিপক্ক দেখতে পাবেন, তখনই গাছ থেকে সাবধানে ফসল তুলে নিতে হবে। সংরক্ষণের জন্য বেছে নিতে হবে শীতল ও শুকনো পরিবেশ। এতে ফল অনেকদিন তাজা থাকবে এবং বাজারে চড়া দামে বিক্রি করতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ DA মামলায় রাজ্য সরকারের উপর জোড়া চাপ! দায়ের দু’দুটি আদালত অবমাননার অভিযোগ

লাভের অংক

যদি আপনি সঠিকভাবে বীজ বপন করতে পারেন, সার প্রয়োগ এবং যত্ন করতে পারেন, তাহলে আপনাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হবে না। কারণ, এক বিঘা পটল চাষ করে আপনি প্রতি বছরে 50 হাজার টাকা থেকে 1 লক্ষ টাকা মিনিমাম আয় করতে পারবেন। পাশাপাশি কিছু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে আর নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করলে ফসলের গুণগত মান আরো বাড়বে এবং টাকার পরিমাণও বাড়বে।

Leave a Comment